আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১৪ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে নাগরিক ছাত্র ঐক্যের ৯ দফা ঘোষণা

দেশচিন্তা ডেস্ক: কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ৯ দফা ঘোষণা করেছে নাগরিক ছাত্র ঐক্য। সংগঠনটির দাবি, রাষ্ট্রের মূল কাঠামোতে সমতা, সামাজিক নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে একটি মানবিক ও কল্যাণমুখী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সংগঠনটি এই ঘোষণা দেয়।

নয় দফা হলো— বিনামূল্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, সবার জন্য সুলভ স্বাস্থ্যসেবা, বেকারত্ব হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার রক্ষা, স্বচ্ছ নির্বাচন ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, মানবাধিকার সুরক্ষা ও বিচার নিশ্চিত করা, পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষা।

সংগঠনের ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষা হতে হবে মানবিক উন্নয়নের ভিত্তি। সবাইকে বিনামূল্যে ও মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা, সরকারি শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধি, বৈষম্য দূর করা এবং প্রযুক্তিনির্ভর পাঠ্যক্রম চালু করা— এগুলোকে তারা কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রথম শর্তের অংশ হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডাটা সায়েন্স, রোবোটিকসের মতো সমসাময়িক বিষয়ে বিশেষায়িত শিক্ষা চালু করা এবং নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা জরুরি।

খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের অধিকারের বিষয়টিও সংগঠনের ঘোষণায় বড় জায়গা পেয়েছে। তারা বলছে, কৃষকের ন্যায্য মূল্য ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা সম্ভব নয়। তাই উৎপাদন উপকরণে ভর্তুকি, কৃষকের ঋণমুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তি এবং দুর্নীতিমুক্ত খাদ্য বিতরণব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের মতে, কৃষিভিত্তিক আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্রই টেকসই উন্নয়নের পথ।

স্বাস্থ্যকে তারা দেখছে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে। দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের চিকিৎসা সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে, জেলা-উপজেলায় আধুনিক হাসপাতাল, চিকিৎসক সংখ্যা বৃদ্ধি, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যনীতি— এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও মাতৃস্বাস্থ্যে রাষ্ট্রীয় যত্ন বাড়ানোর কথা বলা হয়।

সংগঠনটির মতে, সম্মানজনক কর্মসংস্থান ও বাসস্থান ছাড়া কোনো নাগরিক মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে না। তাই তরুণ উদ্যোক্তা তহবিল, নারীর সমান মজুরি, শ্রমিক নিরাপত্তা, ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও করমুক্ত সুবিধা প্রদান এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে বস্তিবাসী ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের কথাও বলা হয়।

নাগরিক ছাত্র ঐক্যের ভাষ্য, একটি মানবিক রাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বিচার ব্যবস্থায় সময়ক্ষেপণ, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করা, মানবাধিকার লঙ্ঘনে শূন্য সহনশীলতা এবং স্থানীয় সরকারকে কার্যকর ক্ষমতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও সংগঠনের ঘোষণায় স্থান পেয়েছে। নারী, শিশু, সংখ্যালঘু ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকার তাদের দাবি।

অর্থনীতি নিয়ে সংগঠনের অবস্থান— রাষ্ট্রীয় সম্পদের বণ্টন হতে হবে স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত। ধনীদের কর বাড়িয়ে আয় বৈষম্য কমানো, দুর্নীতি ও কালো অর্থনীতি দমন, প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা জনগণের হাতে রাখা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার— এসবকে তারা টেকসই উন্নয়নের মূল শর্ত হিসেবে তুলে ধরেছে।

বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকে তারা দেখছে একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি হিসেবে। যুক্তিবাদী শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং প্রযুক্তিকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি— এসব বিষয় তাদের ঘোষণায় এসেছে। পাশাপাশি তথ্য নিরাপত্তা, অনলাইন গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে কেন্দ্র থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করে জেলা-উপজেলায় ক্ষমতা ও বাজেট বণ্টন করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও মানবিক ও স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়, বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় ভূমিকা জোরদারের কথা বলা হয়।

দুর্নীতিকে তারা দেখছে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, পেশাদার ও জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসন গঠন, স্বচ্ছ নিয়োগপদ্ধতি নিশ্চিত করা এবং জনগণের ট্যাক্স ব্যবহারের ওপর জনপর্যবেক্ষণ চালুর দাবিও জানায় সংগঠনটি। তাদের মতে, বিরোধী মতের প্রতি সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার নিশ্চিত করলেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ