
দেশচিন্তা ডেস্ক: নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতর ও বাহির থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন,‘ছোটখাটো নয় বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্চাই আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বৈঠককালে এসব কথা বলেন তিনি। পরে আজ বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এই আক্রমণ বলতে শুধু শারীরিক আক্রমণ নয়, বরং সাইবার অ্যাটাক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিজ-ইনফরমেশন (অপতথ্য) ছড়ানোকেও বোঝানো হচ্ছে। যারা পতিত স্বৈরাচার এবং তার দোসর, তারা দেশে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, তা চাইবে না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলো হলো মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের পদায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য মোকাবিলার উপায়।
নিজ জেলা বা শ্বশুরবাড়ির এলাকায় পদায়ন নয়
প্রেস সচিব বলেন, মাঠ প্রশাসনে, বিশেষ করে ডিসি, এডিসি, ইউএনওসহ বিচারিক দায়িত্বে এমন কাউকে পদায়ন করা হবে না; যিনি গত তিনটি নির্বাচনী কাজে যুক্ত ছিলেন। ন্যূনতম ভূমিকা থাকলেও তাঁকে এই নির্বাচনে দায়িত্বে রাখা হবে না।
পদায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, শারীরিক যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, গণমাধ্যমে অনিয়মের প্রতিবেদন হয়েছে কি না, তা দেখা হবে বলে জানান শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, সবচেয়ে ফিট কর্মকর্তাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পদায়ন করা হবে। তবে নিজ জেলা বা শ্বশুরবাড়ির এলাকায় কাউকে পদায়ন করা হবে না। তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কি না, পদায়নের ক্ষেত্রে সে বিষয়েও লক্ষ রাখা হবে। আগামী ১ নভেম্বর এগুলো শুরু হবে।
শফিকুল আলম আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও সভায় জানিয়েছেন যে পুলিশের পদায়নের বিষয়েও একইভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬৪ জেলার এসপিদের তালিকা করা হয়েছে।
৯০ হাজার সেনাসদস্য মাঠে থাকবেন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, আলোচনায় সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে ৯০ হাজার সেনাসদস্য মাঠে থাকবেন এবং বাকি ২ হাজার নৌবাহিনীর সদস্য থাকবেন। প্রতিটি জেলায় এক কোম্পানি সেনা থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে ও পরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ভুয়া তথ্য ও অপতথ্য মোকাবিলায় দুটি কমিটি হবে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য ও ভুয়া তথ্যের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ও অপতথ্য মোকাবিলায় দুটি কমিটি গঠনের বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। দুটি কমিটিই উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কাজ করবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ছড়িয়ে পড়া অপতথ্য বা ভুয়া তথ্যের ফ্যাক্ট যাচাই করে তা প্রকাশ করবে। এর জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হবে।
নির্বাচন কমিশন সংসদ টিভিকে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করতে চাইছে
প্রেস সচিব আরও জানান, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ (ট্রেনিং) নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণ আরও কার্যকর করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বডি ওর্ন ক্যামেরা নিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রশিক্ষণসংক্রান্ত ভিডিও ও উপকরণগুলো যেন ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট, টিভি বা বিটিভিতে আসে, সে বিষয়ে দ্রুত কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। সংসদ অধিবেশন না থাকায় এখন সংসদ টেলিভিশন ব্যবহৃত হচ্ছে না, তাই নির্বাচন কমিশন সংসদ টিভিকে ব্যবহার করে নির্বাচনসম্পর্কিত যাবতীয় প্রচার করতে চাইছে।
নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে বলেছে যে তারা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তারিখ জানাবে।
নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হবে, এত আতঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে কি না জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘আতঙ্কের কিছু নাই। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওয়ান অব দ্য বেস্ট ইলেকশন হবে।’












