
দেশচিন্তা ডেস্ক: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল, বিশেষ করে জাতীয় পার্টি যেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ব্যবস্থা নিতে বলেছে গণঅধিকার পরিষদ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আইনগতভাবে তাদের বিচার হচ্ছে। সুতরাং তারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ না পায়। একইভাবে এই ফ্যাসিবাদের দোসর যারা, জাতীয় পার্টিসহ যারা ১৪ দল, আসলে নামে থাকলেও বাটি চালান দিলেও কিন্তু এই ১৪ দলের অফিস-টফিস আপনারা খুঁজে পাবেন না। সেই জায়গা থেকে আমরা যেটা দেখেছি, এখানে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির মূল নেক্সাসটা ছিল পাওয়ার পার্টি এবং অপোজিশন। সেই জায়গাতে আমরা জাতীয় পার্টির বিষয়ে বলেছি যে নির্বাচনে যেন অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পায় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন পরিষ্কারভাবে বলেছে যে তারা আসলে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে পারে না। এটা সিদ্ধান্ত দিতে হবে সরকারকে অথবা আদালতকে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী। আপনারা জানেন যে ছোট-বড় সব দলের প্রার্থীরা এখন ফুল সুইংয়ে কিন্তু মাঠে কাজ করে বেড়াচ্ছেন। প্রচার-গণসংযোগে এখন এই জুলাই সনদ নিয়ে যদি বিভক্তি-বিভাজনের জায়গাটা থাকে, তাহলে কিন্তু ইলেকশনটা যথাসময়ে হবে না। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে। আর নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে কিন্তু রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং সর্বোপরি দেশ একটা চরম বিপদের সম্মুখীন হবে, বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, সেই জায়গা থেকে আমরা নির্বাচন কমিশনকেও বলেছি তাদের একটা ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ আছে। কাজেই তারা যেন সরকারপ্রধানের সঙ্গেও সে বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে।
জোটভুক্ত হয়ে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে-ইসির এমন বিধানের বিষয়ে নুর বলেন, আমরা কমিশনকে এই প্রশ্ন করেছিলাম, তারা আমাদের রিকল করিয়েছে মেমোরি থেকে যে এইটা ঐকমত্য কমিশনেই আমাদের আলাপ-আলোচনা সিদ্ধান্তটা হয়েছিল। …এটি হচ্ছে জোটের প্র্যাকটিস, আমরা করতে চাই এবং আমরা এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। যেটা আমরা আগেও বলেছি যে আপনার জোট করলেও নির্বাচন করবে দলগুলো যার যার প্রতীকে। সেখানে হয়তো কিছু কিছু দল বা নেতৃবৃন্দ আপত্তি জানিয়েছে বা জানাতেও পারে। কিন্তু আমরা এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। নির্বাচন কমিশন বরাবর বলেছে যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট যেসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে একমত হয়েছে, সেগুলো ওনারা এক্সিকিউট করছেন। সেইটারই অংশ হিসেবে আসলে এই নির্বাচনে জোটে করলেও প্রার্থীরা যার যার দলের মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
গণঅধিকার পরিষদ ভোটে কারও সঙ্গে জোট করবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা একটা রাইজিং দল হিসেবে আমাদের দলকে বিকশিত করতে সারাদেশে ৩০০ আসনের প্রার্থী বাছাই, তাদের পরিচিত করা, গণসংযোগ, এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আপাতত নির্বাচনের কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের একটা বন্ধুত্ব রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আবার বিএনপি-জামায়াতের বাইরেও একটা বিকল্প রাজনৈতিক জোট গঠন করা যায় কি না, সেগুলো নিয়ে অনেকের সঙ্গে মিটিং হয়, আলাপ-আলোচনা হয়। কিন্তু এগুলো আসলে এখন পর্যন্ত ওই ধরনের কনক্লুশনে পৌঁছানোর মত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
উপদেষ্টাদের ভোট থেকে দূরে রাখার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আগে কিন্তু এটা নিয়মই ছিল যে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না এবং আপনারা জানেন যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বিধান আছে যে অবসরের তিন বছরের মধ্যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। সুতরাং সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি অবশ্যই সরকারের উপদেষ্টা কিংবা সরকারের সুবিধাভোগী কেউ যেন ইমিডিয়েট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। এই বিষয়টা তো ইলেকশন কমিশনকে কনসার্ন থাকতে হবে, না হলে তো এটার ইলেকশন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
নুর বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই জুলাই সনদের বিষয়ে গণভোট, আমার মনে হয় এটাই একটা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এ সময় তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ইঙ্গিত করে বলেন, প্রতীক ইস্যু নিয়ে ইসিকে বিতর্কিত করা ঠিক হবে না। কারণ ইসি জুলাই পরবর্তী সবার মতামত নিয়ে গঠিত হয়েছে। আমাদের প্রতীক হচ্ছে ট্রাক। প্রতীক হিসেবে এটাও আমরা চাইনি। ইসির নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় যেটা ছিল সেটাই পেয়েছি।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।












