
দেশচিন্তা ডেস্ক: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও চবি ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) সহায়তায় ‘জাতীয় পলিসি প্রতিযোগিতা ২০২৫’ এর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টারের চূড়ান্ত পর্ব বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এবং ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নীতি নির্ধারণ, উন্নয়ন ও নেতৃত্ব বিষয়ে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘একটি নতুন দিকে বাংলাদেশ: ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা ও রূপান্তর’।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী।
পলিসি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত ৫টি টিম ১৫ মিনিট করে তাদের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন ‘টিম এডুকেশন’ জাতীয় রাউন্ডে নির্বাচিত হয়। এর আগে ৩৯টি টিম প্রেজেন্টেশন ও শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এগুলোর মধ্যে ৫টি টিম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টারের চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়। প্রেজেন্টেশনে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা খাতের বিভিন্ন পলিসির ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা বা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব বিশেষ করে একাডেমিক কার্যক্রম বেশি বেশি করার চেষ্টা করেছি। আজকে আমাদের শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে তাদের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেছে। পাঁচটি উপস্থাপনাই অনেক সুন্দর ছিল। শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের এসব প্রস্তাবিত নীতি সরকারের আমলে নিয়ে কাজ করা উচিত। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের দেশ উন্নত দেশগুলোর তুলনায় একদম পিছিয়ে। সুনির্দিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা না থাকার কারণে এ খাতে দূরাবস্থা কাটছে না। অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করেনি। অথচ বলা হয়, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সরকারের কাছে শিক্ষা কমিশন গঠনসহ শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের আহ্বান জানান চবি উপাচার্য।
চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, শিক্ষানীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের এসব প্রস্তাবিত নীতি লেখকদের লেখনীতে এবং গণমসাধ্যমে উঠে আসা দরকার। এছাড়া প্রত্যেকটি প্রস্তাব চাইলে সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে। এমন একটি দারুণ উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান তিনি।
চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিনও শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত প্রেজেন্টেশনের বাস্তবায়ন চেয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের পলিসিগুলো কালকেই বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও আয়োজকদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব মো. আয়মন হাসান রাহাত বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যখনই ক্রান্তিকাল ছিল, তখনই হাল ধরেছিল তরুণরা। যেমনটা জুলাইয়ে তরুণদের হাতে বিপ্লব ঘটেছে। জুলাইয়ের মাধ্যমে সবাই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। এ নতুন বাংলাদেশ কেমন হবে সেক্ষেত্রে তরুণদের ভাবনা জানা দরকার। সেজন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সম্মতিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে তরুণরা কেমন শিক্ষানীতি চায়, তা জানা যাবে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে টিম এডুকেশন, দ্বিতীয় হয়েছে টিম জেনজারি ও তৃতীয় হয়েছে টিম ফিনিক্স। প্রতি টিমে তিনজন করে সদস্য রয়েছে। প্রথম স্থান অধিকারী টিমকে ৪৫ হাজার, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী টিমকে ৩০ হাজার ও তৃতীয় স্থান অধিকারী টিমকে ১৫ হাজার নগদ টাকা, সম্মননা ক্রেস্ট ও লকেট প্রদান করেন অতিথিরা।
এ প্রতিযোগিতায় জুরি বোর্ডে ছিলেন চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) ও লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমদ, শাহজালাল হলের প্রভোস্ট ও মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. ফুয়াদ হাসান, ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রোকন উদ্দীন ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ইব্রাহিম হোসেন। অনুষ্ঠানে জুরি বোর্ডের সদস্য ও অতিথিদের সম্মননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. ইকবাল শাহীন খান, আইকিউএসির পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন, চবি প্রক্টর প্রফেসর হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী ও তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. মো. শহীদুল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।