আজ : শুক্রবার ║ ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শুক্রবার ║ ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশের পাটশিল্পে বৃহৎ বিনিয়োগের পরিকল্পনা চীনের

দেশচিন্তা ডেস্ক: বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল এবং ওষুধ খাতে বিপুল বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চীনের বিনিয়োগকারীরা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ম্যানুফ্যাকচারিং রূপান্তরের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই আগ্রহের কথা জানিয়েছেন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়না (চায়না এক্সিম ব্যাঙ্ক)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং দংনিং।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ইয়াং দংনিং এই বিষয়ে কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্টেট-রান ইনস্টিটিউট অব ফিন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির (আইএফএস) প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

ইয়াং দংনিং বলেন, ‘চীন ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও, বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন খাতগুলোতে মনোনিবেশ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে ছাদের ওপরে বসানো সোলার প্যানেল (রুফটপ সোলার) এবং বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ পাট খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ। বিশেষত, পাট ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন, জৈব-সার এবং প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য তৈরির দিকে চীনের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।’

ড. মা জুন জানান, চীনা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ স্থাপনে আগ্রহী এবং তারা প্রায় ১০ লাখ টন পাট ব্যবহার করে সবুজ জ্বালানি, সার এবং প্লাস্টিকের কার্যকর বিকল্প তৈরি করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘চীনা অর্থায়নে পাট খাতে যৌথ উদ্যোগের বড় সুযোগ রয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং দংনিং। ছবি: প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে চীনের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্রে (ম্যানুফেকটারিং হাব) পরিণত করতে সাহায্য করতে পারেন, যেখান থেকে চীনসহ উন্নত দেশগুলোতে পণ্য রফতানি করা যাবে।

অধ্যাপক ইউনূস ফার্মাসিউটিক্যালস এবং স্বাস্থ্যসেবাকে চীনা বিনিয়োগের জন্য শক্তিশালী অতিরিক্ত ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি চীনকে বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরিত করার আহ্বান জানান এবং বিপুল সংখ্যক তরুণ কর্মীকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোকে নতুন যৌথ উদ্যোগের জন্য ব্যবহার করার পরামর্শও দেন।

ইয়াং দংনিং আরও জানান, চীনা কোম্পানিগুলি এআই এবং ই-কমার্স খাতেও বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।

এর প্রত্যুত্তরে প্রধান উপদেষ্টা চীনা সংস্থাগুলোকে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরিত করার আমন্ত্রণ জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এই অঞ্চলে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর রয়েছে এবং কৌশলগতভাবে এটি মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বাজারের কাছাকাছি।

এ ছাড়া, অধ্যাপক ইউনূস চীনা অবকাঠামো সংস্থাগুলোকে দক্ষিণ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার জন্য রেললাইন নির্মাণে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান। এতে স্থানান্তরিত কারখানাগুলো থেকে পণ্য রফতানি এবং আঞ্চলিক সংযোগ আরও সহজ হবে।

বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা হংকংয়ে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ