আজ : শনিবার ║ ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৫ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৮শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

দুর্গাপূজায় ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ এলাকার তালিকা প্রকাশ করল সম্প্রীতি যাত্রা

দেশচিন্তা ডেস্ক: দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দেশের ২৯ জেলাকে ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নাগরিক সমাজকে নিয়ে নবগঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘সম্প্রীতি যাত্রা’।

বিগত এক দশকে দেশজুড়ে পূজা ও অন্যান্য সময়ে পূজামণ্ডপে, শোভাযাত্রার পথে বা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই ‘ঝুঁকি মানচিত্র’ তৈরি করার কথা বলেছে তারা। এ মানচিত্রে ২৯টি ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ জেলার মধ্যে পাঁচটি জেলা ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলেও মনে করছে সম্প্রীতি যাত্রা।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিট মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পূজায় ঝুঁকিপ্রবণ জেলাগুলোর তালিকা তুলে ধরা হয়েছে।

এদিন মসজিদ, মন্দির, মাজার, আখড়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক অধিকার কার্যকরভাবে রক্ষার প্রয়াসে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের প্ল্যাটফর্মটি একটি কর্মসূচি হিসেবেও করার কথা বলেছে।

‘মসজিদ, মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সম্প্রীতি যাত্রার ডাক এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় ঝুঁকি পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ এলাকার তালিকা প্রকাশ করেন লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা আল-মামদূহ।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে ঢাকা, রংপুর, যশোর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা। আর ‘মাঝারি ঝুঁকিতে’ থাকা জেলার তালিকায় রয়েছে-গাজীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও নেত্রকোণা।

বাকি ৩৫ জেলাকেও তারা ঝুঁকিমুক্ত বলছেন না, পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের কাছে সেসব জেলা ‘নিন্ম ঝুঁকিপূর্ণ’।

মীর হুযাইফার ভাষ্য, হামলায় প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, একই সময়ে একাধিক স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা, ভিন্ন ভিন্ন বছরে পুনরাবৃত্তি, নিশানার ধরন ও পরিসর বিবেচনায় এনে ‘ঝুঁকির মাত্রা’ নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “বৈষম্যহীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পরও এ প্রবণতার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। বরং গুজব, উসকানি ও সহিংসতার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মন্দির-মণ্ডপে ভাঙচুর, মাজার ও দরগাহে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, আখড়া ও বাউল-কাওয়ালি আসরে হামলা, এমনকি মসজিদে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জেরে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও গোলযোগ সংঘটিত হয়েছে।

“এসব কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো হল-একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে দুর্বল করা। তাছাড়া এই হামলাগুলো কোনো একক সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হয়নি; বরং এগুলো বাংলাদেশের সামগ্রিক সামাজিক সংহতি ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলার ওপর আঘাত আনতে করা হয়েছে।”

‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের কর্মসূচির সূচনার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সাম্প্রদায়িক উসকানি ও বিভ্রান্তি রুখে দিতে আমরা যুক্ত করছি ‘ফ্যাক্টচেকিং টিম’। এছাড়াও আমরা যুক্ত করেছি ঝুঁকিপূর্ণ জেলাসমূহের স্থানীয় নাগরিক সমাজের সংগঠন, সংখ্যালঘুদের সংগঠন, সুফি ও মাজারভিত্তিক সংগঠন, বাউল ও ফকির সম্প্রদায়, আদিবাসী সংগঠন, নারী সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রগতিশীল অংশ।”

এ সময় তাদের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে ‘সম্প্রীতি কমিটি গঠন’, পর্যবেক্ষণ ও নথিভুক্তি, গুজব প্রতিরোধ, দ্রুত সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলেন মীর হুযাইফা।

সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মাহা মির্জা সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ‘শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা’ পেলেও মাঠপর্যায়ে তেমন কিছু ‘দেখতে না পাওয়ায়’ হতাশা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি অন্তর্বর্তী সরকার মব ঠেকানো থেকে শুরু করে মাজার পোড়ানো এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে গোষ্ঠীগুলো আছে তাদের উপর যে নিপীড়নগুলো হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”

জুলাই অভ্যুত্থানের পরে এ ধরনের ‘ব্যর্থতা’ এবং এ ধরনের ঘটাগুলোকে ‘স্বাভাবিকায়ন’ করা একেবারেই ‘কাম্য নয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মাহা মির্জার বলেন, “আমরা মনে করি এ ধরনের জঘন্য ঘটনাগুলোর স্বাভাবিকায়ন হচ্ছে, যেটা কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবে না। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটার ব্যবস্থা নিতে হবে স্বয়ং রাষ্ট্রকে। সরকার কোনোভাবেই হাত ধুয়ে ফেলতে পারেন না।”

সংস্কৃতিকর্মী জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, “রাষ্ট্র না চাইলে দাঙ্গা হয় না, কথাটি আমাদের দেশের জন্য খুবই প্রযোজ্য এবং সঠিক। সরকার যদি চায়, এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৬ হাজার ৬০০টি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি।”

যে ফ্যাসিবাদী সরকার কাঠামো বিতাড়নের জন্য লড়াই করা হল, সেই কাঠামো ‘এখনও বিদ্যমান’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শিল্পী অরূপ রাহী বলেন, “কোনো ঘটনার কোনো সঠিক বিচার এখন পর্যন্ত হয় নাই। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ঢুকবো আশা করে যাত্রা শুরু করলাম বটে, কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই হাসিনা আমলের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সেটা কিন্তু আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি।”

‘সম্প্রীতি যাত্রা’ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পী বিথী ঘোষ বলেন, “সম্প্রীতির যাত্রা একটা উদ্যোগ। এই উদ্যোগে কিছু মানুষ নিজের তাগিদ থেকে যুক্ত হয়েছে। আমরা চাই, এই উদ্যোগের বার্তাটা যাতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা আমাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী, তারা যেন যোগাযোগ করতে পারেন।

“এখানে অনেকগুলো পরিকল্পনা দেওয়া আছে, এর বাইরে কারো আরো কোনো পরিকল্পনা থাকলে, সেই ভাবনাটা যেন উসকে দেয়। শুধু সম্প্রীতির যাত্রার সাথে যুক্তই হতে চান তা নয়, আপনারা নিজেরাও যদি এই উদ্যোগগুলো নেন তাহলে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।”

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ