
সাতকানিয়া প্রতিনিধি: সাতকানিয়া উপজেলার ১১ নং কালিয়াইশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাফেজ আহমদ দীর্ঘদিন কালিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের ১৫ জন চেয়ারম্যান পালিয়ে যায়।
সাতকানিয়ায় উপজেলায় একমাত্র ছদাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কালিয়াইশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদ এলাকায় থেকে নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে অফিস করে নাগরিক সেবা প্রদান করে।
দেশের এই বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিগত বছরের ৭ই আগস্ট কালিয়াইশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাফেজ আহমদ কালিয়াইশ ইউনিয়নের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হন।
উক্ত জরুরি সভায় কালিয়াইশ ইউনিয়নের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ” কালিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের জনগনের সেবা ও উন্নয়ন মুলক কর্মকাণ্ড পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চেয়ারম্যানকে পরামর্শ মূলক সবাই অকুন্ঠ সমর্থন প্রদান করেন।
উক্ত মিটিং এ বিএনপি নেতা আসহাব উদ্দীন ভুঁইয়া, বিএনপি নেতা গাজী মোহাম্মদ ফোরকান, বিএনপি নেতা ইলিয়াস বাবলু, বিএনপি নেতা শামসুল ইসলাম বাবলু, বিএনপি নেতা নাছির উদ্দীন, শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তাক, নুরুল ইসলাম, জমায়াত ইসলামী বাংলাদেশ কালিয়াইশ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর জিহাদি, সাইফুদ্দিন খালেদ, এলডিপি নেতা আবদুল জব্বার, এলডিপি নেতা ছিদ্দিক আহমদসহ অসংখ্য বিএনপি, জমায়াত ও এলডিপি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ জানান -ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগ সরকারের সময়কালে দীর্ঘ ২ মেয়াদে চলমান দায়িত্বে হাফেজ আহমদ চেয়ারম্যানের কখনো এলাকার ভিন্ন দলের ও ভিন্ন মতের নেতা কর্মীকে রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করেনি এবং কেউ জেল, জুলুমের শিকার হয়নি।
হাফেজ চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডে সন্তুষ্টি চিত্তে উপস্থিত দলের নেতৃবৃন্দ চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন ও বিচার কার্যক্রম সুন্দর এবং সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য সকলে চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদকে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দীর্ঘ এক বছর পর গত ১৭ আগস্ট ২০২৫ ইং রবিবার সকালে তৎকালীন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মদদে তার ছোট ভাইয়ের প্রত্যক্ষ এবং স্বশরীর উপস্থিতিতে তার সাথে ২০/৩০ জন বিপদগামী বহিরাগত লোক নিয়ে মব সৃষ্টি করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন যা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশকে স্পষ্ট অবমাননা। এদিকে কালিয়াইশ ২ নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- হাফেজ আহমদ কালিয়াইশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে আইনগত কোন বাধা নেই। এই খবর পেয়ে কিছু বহিরাগত ও পরাজিত প্রার্থীর পক্ষের লোক ইউনিয়ন পরিষদ ভাংচুর করে যা খুবই দুঃখজনক।
আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এখন আমরা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। উনি পরিষদে বসলে আমরা নাগরিক সেবা পেতাম।
কালিয়াইশ ইউনিয়ন জামায়াত নেতা রফিক আহমদ বলেন,আলহাজ্ব হাফেজ আহমদ চেয়ারম্যানের সময় বিএনপি, জমায়াত, এলডিপি সবাই আওয়ামিলীগ ও পুলিশের নির্যাতন থেকে মুক্ত ছিলেন তখন আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীরা বলতেন হাফেজ আহমদ চেয়ারম্যান বিএনপি জামায়াতের লোক, এই অজুহাতে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কালিয়াইশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯০% নেতা কর্মী হাফেজ আহমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এবং হাফেজ আহমদ এর বিরুদ্ধে একজন প্রার্থীও দাড় করিয়ে দেন। বিএনপি এবং জামায়াতের লোকজন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।
কালিয়াইশ ৪ নং ওয়ার্ডের জামায়াত নেতা মোঃ ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান- হাফেজ আহমদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমরা নিরাপদে ছিলাম ওনি সবসময় আমাদের সহযোগিতা করে গেছে, বিভিন্ন সময় বিএনপি জামায়াতের আন্দোলন সময় কালিয়াইশ ইউনিয়নের বিএনপি, জামায়াত নেতাদের তালিকা দিতে পুলিশ চাপ সৃষ্টি করলেও হাফেজ আহমদ চেয়ারম্যান প্রশাসনিক চাপে কখনো মাথা নত করেননি এবং বলতেন কালিয়াইশ ইউনিয়নে কোন রাজনৈতিক হানাহানি নেই।
তার সময় কালিয়াইশ ইউনিয়নে কাউকে রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করতে দেয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্যমতে, ইউপি চেয়ারম্যানরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে। গ্রামে বিভিন্ন সালিস, নতুন রাস্তা নির্মাণ, পুরোনো রাস্তা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, চেয়ারম্যান না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে এই মুহূর্তে সেবা কতটা ব্যাহত হচ্ছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালিয়াইশ পশ্চিম কাঠগড় ১ নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা জানান- হাফেজ চেয়ারম্যান সবসময় পরিষদের সেবা দিতেন। যে কোন সনদ একদিনের মধ্যে পেয়ে যেতাম এখন ১৫/২০ দিন লাগে একটি নাগরিক সনদ পেতে। জরুরি পাসপোর্ট করতে জাতীয় সনদ প্রয়োজন হলে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদে গিয়ে আনতে হয় সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। কালিয়াইশ মাষ্টারহাটের বাসিন্দা মাওলানা আবুল হোছাইন কালিয়াইশী জানান -হাফেজ আহমদ চেয়ারম্যানের সময় তিনি কখনো কাউকে ভিন্ন মতাদর্শের লোক মনে করেন নি। তিনি সব সময় বলতেন পুরো কালিয়াইশ ইউনিয়নের বাসিন্দারা আমার পরিবার। তিনি কালিয়াইশের মানুষকে পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচিয়েছে। তার এই জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি গোষ্ঠী দীর্ঘ এক বছর পর মব সৃষ্টি করে শান্ত কালিয়াইশকে অশান্ত করার যে হীন চক্রান্ত তা কালিয়াইশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না।