
সময় যত গড়াচ্ছে চট্টগ্রামে বেড়েই চলেছে বন্যার পানি, একই সাথে বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যাও। জেলার নয়টি উপজেলায় ৪৫ হাজার ৯১৬টি পরিবারের দুই লাখ ৪৮ হাজার ৫০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার।
অতিবৃষ্টি এবং ভারত থেকে আসা ঢলের পানিতে এসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকালের পর থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ৯টি উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ফটিকছড়িতে ২০টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৫৮০ পরিবারের এক লাখ ২ হাজার মানুষ রয়েছেন। একইভাবে মীরসরাই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১২ হাজার পরিবারের ৪৮ হাজার ৫০০, সীতাকুণ্ডের ৬টি ইউনিয়নের ৫ হাজার পরিবারের ২০ হাজার, হাটহাজারীতে ১২০টি পরিবারের ২ হাজার ৮০০, কর্ণফুলীতে ৫টি ইউনিয়নের ১০০টি পরিবারের ৫০০, পটিয়ায় ১৮টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ৯৪৬টি পরিবারের ২০ হাজার, বোয়ালখালীতে ৩টি ইউনিয়নে ১০০ পরিবারে ৭০০, বাঁশখালীতে ৮টি ইউনিয়নে এক হাজার ৭৫০টি পরিবারের ৮ হাজার ৭৫০ এবং রাউজানে ১৩টি ইউনিয়নের ৩২০টি পরিবারের এক হাজার ৬০০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ৮০০ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফটিকছড়িতে ৫০ টন, মীরসরাইয়ে ৫০ টন, সীতাকুণ্ডে ২০ টন, হাটহাজারীতে ১৫ টন, কর্ণফুলীতে ১০ টন, পটিয়ায় ১০ টন, বোয়ালখালীতে ১০ টন, বাঁশখালীতে ২০ টন এবং রাউজানে ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর অনেকে ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। কেউ কেউ গৃহপালিত প্রাণী সঙ্গে নিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘বন্যাকবলিত ৯টি উপজেলায় ১১১টি মোবাইল টিম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফটিকছড়িতে ৭টি, মীরসরাইয়ে ২১টি, সীতাকুণ্ডে ১৫টি, হাটহাজারীতে ২০টি, পটিয়ায় ২৩টি, বোয়ালখালীতে ১৫টি এবং বাঁশখালীতে ১৫টি।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে ফটিকছড়ির বিভিন্ন স্থানের খালগুলোর পানি উপচে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ফটিকছড়িতে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধস পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।’
ফটিকছড়ি উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, হালদা নদী এবং ধুরুং খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গহিরা-হেয়াকো সড়কের পাইন্দং-নারায়নহাট, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কের সুয়াবিল এলাকা, কাটিরহাট-সমিতিরহাট ও নানুপুর সমিতির হাটের সংযোগ সড়কসহ কয়েকটি স্থানে কোমর থেকে গলা-সমান পানি জমেছে।
চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল বারেক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে বৃষ্টি কমে আসবে। টানা বৃষ্টি পড়বে না। তবে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়বে আরও তিন দিন। এরপর সূর্যের দেখা মিলবে বলে আশা করা যায়।’