আজ : শনিবার ║ ১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চেম্বারে যাওয়ার সময় ডাক্তারকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা!

দেশচিন্তা ডেস্ক

সাতকানিয়ায় চেম্বারে যাওয়ার পথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা গুনতে হয়েছে এক চিকিৎসককে। ডা. ফরহাদ কবির নামে ওই চিকিৎসককে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকা ইউএনও মো. নজরুল ইসলাম। 

চিকিৎসকদের চেম্বারে আসা-যাওয়ায় কোন বিধি-নিষেধ না থাকার কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চিকিৎসককে জেলে দেওয়ার ক্ষমতার রয়েছে তার সেই হুঙ্কারও দেন।

শুক্রবার বিকেলে সাতকানিয়া পৌরসভা এলাকায় এ ঘটনা ঘটলেও শনিবার তা জানাজানি হয়। এনিয়ে ক্ষুব্ধ চিকিৎসক নেতারা। ইউএনওর শাস্তির দাবিতে দ্বারস্থও হয়েছেন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে। তবে ইউএনও বিষয়টি অন্যায়ের বলে মনে করছেন না। তিনি বলছেন, সরকারি আইন বাস্তবায়ন করেছেন।

জরিমানার শিকার হওয়া সাতকানিয়ার মির্জারখীল এলাকার বাসিন্দা ডা. ফরহাদ কবির জানান, আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। ওই সময় একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম। তখন সাতকানিয়া পৌরসভার কলেজ রোডের মুখে ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা হয়। এসময় ইউএনও’র সাথে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটর সাইকেল থামিয়ে আমার পরিচয় দেই। ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘আপনারা লকডাউন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আর এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না। এরপর ইউএনও’র সাথে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবিটি নিয়ে ফেলেন।’

ডা. ফরহাদ আরও জানান, “এক পর্যায়ে ইউএনও বলেন, ‘আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে’।”

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে বের হয়েছেন এজন্য। তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া আসায় বিধি-নিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরও বেশি রাগান্বিত হয়ে যান ইউএনও।

এসময় ইউএনও বলেন, ‘আমি চাইলে আপনাকে জেলে দিতে পারি। তা করলাম না, এক হাজার টাকা জরিমানা দেন।’

ডাক্তার ফরহাদ কবির আরও জানান, অনেক লোকের সামনে তিনি ডাক্তারদের সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে মামলা লিখে আমার হাতে দিয়ে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন আমি টাকা দিয়ে দেই। এরপর ইউএনও বলেন, সাংবাদিকরা ছবি উঠান, ডাক্তারকে যে জরিমানা করছি এটা পত্রিকায় দিতে হবে। পরে অনেকে মুঠোফোনে আমার ছবি তুলেছেন। জীবনে আমি কোনদিন এধরনের অপমান বোধ করিনি। আমি বুঝতে পারছি না একজন ইউএনও কিভাবে এমন খারাপ আচারণ করতে পারেন?’

ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, উনি যে ডাক্তার সেটাতো আমি বুঝতে পারিনি। উনার সাথে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং হেলমেট ছিল না। তিনি যে অন্যায় করেছেন সেটা নিজে বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমার অন্যায় হয়েছে। আমাকে শাস্তি দেন। পরে আমি এক হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আইন সবার জন্য সমান। সরকার আইন করেছে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি চাইলে আপীল করতে পারেন। মূলত সন্ধ্যা ৭টার পর পাওয়াতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকাতে জরিমানা করা হয়েছে।

ইউএনও ডাক্তারের সাথে পরিচয় পত্র না থাকার কথা বললেও মামলায় ডাক্তার ফরহাদ কবির লেখা হয়েছে। মোটরযান আইন মামলা দেয়ার কথা বললেও মামলায় অপরাধ হিসেবে দণ্ডবিধি ২৭০ ও ২৭১ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ধারায় বিদ্বেষপূর্ণ কর্ম, যা দ্বারা জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সঙ্গরোধ সংক্রান্ত নিয়ম অমান্য করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগী ডাক্তার আমাকে জানাননি। স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। উনারা বলেছেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চলমান লকডাউনে ডাক্তারদের চলাচলের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই উঠে না।

ঘটনার বিষয়ে স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, লকডাউনে ডাক্তারদের চলাচলে সরকারিভাবে কোন ধরনের বাধা নাই। এরপরও একজন ডাক্তার রোগী দেখার জন্য চেম্বারে যাওয়ার সময় ইউএনও’র এমন আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। চিকিৎসকরা করোনা মহামারীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইউএনও’র এমন আচরণ চিকিৎসকদের হতাশ করে ফেলবে। যে চিকিৎসককে জরিমানা করেছে তার গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকলে মোটরযান আইনে মামলা দিতে পারতেন। তিনি মামলার কাগজে ডাক্তার উল্লেখ করে সংক্রমণ আইনে মামলা দিয়েছেন। এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এছাড়া ইউএনও লোকজনের সামনে ডাক্তারদের নিয়ে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে। এজন্য ইউএনও’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ