আজ : শুক্রবার ║ ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শুক্রবার ║ ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

দেশে যারা প্রথমে করোনার টিকা পাবেন

দেশচিন্তা ডেস্ক:

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ৩ কোটি টিকা কিনছে সরকার। এ বিষয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে আগামী ছয় মাসে এ টিকা দেবে। ইতোমধ্যে বিশেষ এ টিকা সংরক্ষণের জন্য গুদাম প্রস্তুতকরণ কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে যারা আগে টিকা পাবেন তাদের তালিকাও তৈরি শুরু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

করোনা ভাইরাস নিরাময়ে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিকে সুস্থ করতে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসক, রোগতত্ত্ববিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহামারী আকারে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস থেকে বাঁচার স্থায়ী সমাধান দিতে পারে টিকা। এ জন্য করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা তৈরিতে উঠেপড়ে লেগেছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা

টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়েও গেছেন। এরই মধ্যে বিশে^ ৬টি টিকার শেষ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন পেলে তা মানবদেহে প্রয়োগের জন্য উৎপাদনে যাবে কয়েকটি কোম্পানি। এ ছাড়া গবেষণাগারে আরও ১২টি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা চলছে।

সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের একের পর এক টিকার সাফল্যের খবরে আগ্রহ-উত্তেজনা বাড়ছে বাংলাদেশেও। দেশে কবে টিকা আসবে, কবে নাগাদ দেশের মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার সুযোগ ঘটবে এমন প্রশ্ন এখন সবারই। বিষয়টি নিয়ে সচেতন আছেন সরকারও। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি ৩ কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টিকা পাওয়ার পর তা কোথায় সংরক্ষণ করা হবে সে বিষয়ে যেমন কাজ চরছে, তেমনি দেশে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাদের আগে তা প্রয়োগ করা হবে তার তালিকা তৈরি শুরু হয়েছে। এমনকি মাঠপর্যায়েও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে টিকা প্রয়োগের জন্য। ভারতে যদি টিকা চলে আসে তখনই তা বাংলাদেশেও ঢুকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার পরও টিকা বিষয়ে ডব্লিউএইচও, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনিজ অ্যান্ড ইমুউনিজেশন (গ্যাভি) ও কোভেক্স নেতাদের সঙ্গে সরকারের কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল বৈঠক চলছে। আগেই সরকার কোভেক্সভুক্ত হয়েছে এবং নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাও দিয়েছে, যেখান থেকে প্রাথমিকভাবে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এ মাধ্যমে বাংলাদেশে কবে নাগাদ টিকা আসতে পারে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে টিকার কার্যকারিতা যত ভালো হবে, সেটির প্রতিই মানুষের আগ্রহ বাড়বে। সে ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনতে যে চুক্তি করেছে সেটা যথেষ্ট নয়। তাই টিকা আগে পেতে হলে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও চুক্তি করা প্রয়োজন। যে ৬টি টিকা সীমিত পরিসরে বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের তৎপরতা বাড়ানো দরকার। নয়তো পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি ৩ কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য গত ৫ নভেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক (এমইউ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দেশের বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে এ সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ডের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলে সেরাম ইনস্টিটিউট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে তা বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহ করবে। এ ৩ কোটি টিকার ডোজ দুবার করে প্রতি ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। ফলে প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে। এর পর একইভাবে ২৮ দিন পর তাদের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, করোনার টিকা প্রস্তুত হলে তা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ, পরিবহন ও সুষ্ঠুভাবে সরবরাহের লক্ষ্যে গত ২০ অক্টোবর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে উপদেষ্টা করে ২৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির একজন সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, আমরা করোনা মোকাবিলায় অক্সফোর্ডের তৈরি যে টিকা পেতে চুক্তি করেছি সেটি যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়, তা রাখার মতো ক্যাপাসিটি আমাদের আছে। আমরা অন্যান্য টিকা সেভাবে রাখি সব সময়। তবে আমাদের আরও কিছু অতিরিক্ত যন্ত্রপাতি কেনা লাগবে, সেটি খুব কঠিন কাজ নয়। আরেকটি কথা হলো আমরা যে ৩ কোটি টিকা কিনছি তা একসঙ্গে আসবে না। আমরা প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ছয় মাস টিকা পাব। আর একসঙ্গে ৫০ লাখ টিকা রাখার মতো ক্যাপাসিটি আমাদের রয়েছ।

তিনি আরও বলেন, টিকা আসলে কারা আগে পাবেন ও কীভাবে পাবেন, তার জন্য ন্যাশনাল ডিপ্লোমেট প্ল্যানে প্রায়োরিটি সিলেকশন নামে একটি খাত রয়েছে। সেখানে বলা আছে, কারা আগে পাবেন এবং কীভাবে পাবেন। এ জন্য একটি ন্যাশনাল গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে, সেই গ্রুপ নিয়ে এখন কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক খসড়া তালিকা প্রস্তুত হয়েছে এবং সেটি সবাই দেখছেন। সবাই দেখে মতামত দিলে সেটি ফাইনাল ড্রাফট করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করব। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তা আমরা জানাতে পারব কারা আগে পাবেন এবং কীভাবে পাবেন।

কমিটির ওই সদস্য বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে সরকারের যে চুক্তি হয়েছে সেটি অনুযায়ী তারা প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে কাগজপত্র চেয়েছেন। যত দিন পর্যন্ত সেরাম টিকা উৎপাদন অবস্থায় না আনবে ততদিন তো আমরা আনতে পারব না। তা ছাড়া টিকা উৎপাদনে সেই দেশের অনুমতি লাগবে, ডব্লিওএইচওর অনুমতি লাগবে। তার পর আমরা আনতে পারব। তবে এর বাইরে আমরা গ্যাভি থেকে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষের জন্য ৭ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা পাব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া বলেন, অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ে যে চুক্তি হয়েছে তার প্রতিটির দাম কত হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটি এখন আলোচনা পর্যায়ে আছে।

এদিকে বাংলাদেশে চীনের সিনোভ্যাকের তৈরি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আর্থিক কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তবে নতুন করে ফরাসি ওষুধ কোম্পানি সনোফি উৎপাদিত টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এর জন্য ইতোমধ্যে বিএসএমএমইউ বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) আবেদন করেছে। আবেদনটি এখন বিশেষজ্ঞ কমিটিতে যাচাই-বাছাই হচ্ছে।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ