
পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নান রূঢ় ও অশালীন আচরণ করায় তাকে প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।৪ মার্চ বুধবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এসময় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নান অত্যন্ত রূঢ় ও অশালীন আচরণ করেছেন। তাই তাকে প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।’
আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই ঘটনায় বারের সকলে আদালত বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেন। এই পরিস্থিতিতে গন্ডগোল চলছিল। রাস্তায় লোকজন বেরিয়ে পড়েছিল। সেটাকে কন্ট্রোল করার জন্য বিচারককে স্ট্যান্ড রিলিজ করে আদেশ দেওয়া হয় আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে। জামিন দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। কিন্তু আদালত যদি এমন ব্যবহার করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও আইনের শাসন রক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন একটা ব্যবস্থা নিতে হয়। সেই অবস্থার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার স্ত্রীকে জামিন দেওয়া হয়। আমি মনে করি এখানে আইনের শাসনের কোনও ব্যত্যয় হয়নি।’
আইনমন্ত্রী জানান দুদকের আইনজীবীরা এই ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করেছেন। জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নিরপেক্ষ থাকতে চাই, যতক্ষণ না পুরো তথ্য আমার কাছে আসে। পুরো ঘটনার তদন্ত করা হবে। যে তথ্য পাওয়া গেছে, বারের রেজ্যুলেশন আছে, তাতে জেলা জজ যে ব্যবহার করেছেন সেটা সমীচীন হয়নি।’
এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ বিষয়ে জানেত চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক কিছুই চাইতে পারেন। কিন্তু দুঃখজনক, না জেনে দোষারোপ করায় তিনি অন্যায় করেছেন। এর থেকে বাড়লে আমি ব্যবস্থা নেবো।’
এর আগে, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পিরোজপুর জেলা জজ আদালতে আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন জামিনের আবেদন করেন। বিচারক আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই ঘটনার মাত্র চার ঘণ্টা পর বিকাল পৌনে চারটার দিকে পিরোজপুরের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক নাহিদ নাসরিনের আদালতে জামিন বাতিলের আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানালে বিচারক আউয়াল দম্পতির জামিন মঞ্জুর করেন। এরপরই জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবদুল মান্নানকে প্রত্যাহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ উপজেলা) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আউয়াল ও তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে বরিশাল দুদক কার্যালয়ে তিনটি মামলা করেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লাকে আসামি করা হয়েছে। বাকি দুটিতে এককভাবে আসামি করা হয়েছে আউয়ালকে। মামলা দায়েরের পর তারা গত ৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে একটি বেঞ্চ তাদের আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার (৩ মার্চ) পিরোজপুরের জেলা জজ আদালত থেকে তারা ফের জামিন পেলেন।
								
													
















