আজ : সোমবার ║ ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : সোমবার ║ ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

চাইলেই দুর্নীতি নির্মূল করা না গেলেও কমানো সম্ভব : দুদক চেয়ারম্যান

দেশচিন্তা ডেস্ক: চাইলেই দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করা না গেলেও কমানো সম্ভব বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

রোববার (২৬ অক্টোবর) যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের ১৮৭তম গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর সংস্থায় সেবার মান বৃদ্ধি, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি রোধে ওই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

দুদক চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, আজকে যারা এসেছেন এর মধ্যে দুইটা ভাগ। একটা হচ্ছে সেবাদাতা, যারা মূলত সরকারি অর্থে লালিত-পালিত। আরেকটা অংশ হচ্ছে সেবাগ্রহীতা। এটাই হচ্ছে বড়ো অংশ। তারা সরকারের আনুগত্য খুব কমই পেয়ে থাকেন। কষ্ট করে জীবন ধারণ করেন এবং তাদের এই কষ্টার্জিত অর্থের কিছু অংশ কর হিসেবে সরকার নিয়ে নেয়। সেটা দিয়ে আমাদের বেতন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি একেবারে শেষ করে দিতে পারবে-নির্মূল করতে পারবে; আমি যদি এখনই প্রত্যাশা করি, এটা একটু বেশি প্রত্যাশা করা হবে। তবে এটা তো স্বীকার করতে হবে যে চাইলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।

গণশুনানি প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, আমরা কিন্তু জনগণকে, কর্মকর্তাদের মুখোমুখি করে দিচ্ছি না। আমরা করে দিচ্ছি সম্পৃক্ত। সম্পৃক্ত করে দেওয়ার লাভটা হচ্ছে পরস্পর পরস্পরের কাছে যে এক্সেস সেই এক্সেসটা পাওয়া। আমরা যখন যশোর থেকে চাকরি জীবন শেষ করে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাব, কিংবা চাকরি জীবন শেষ হয়ে যাবে, অন্যত্র চলে যাব, যাওয়ার সময় যদি দেখি যশোরের মানুষের চোখের কোনায় একটু অশ্রুবিন্দু নেমে এসেছে তাহলে তখন বলব যে, আমি বোধহয় জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলাম। আমি বোধহয় জনগণকে কিছুটা হলেও সেবা দিতে পেরেছি। আর আমি চলে যাওয়ার সময় যদি হাততালি পড়ে তখন বুঝতে হবে যে আসলে জনগণ আমাকে চায়নি। আমি গায়ের জোরে একদিন আমি এখানে ছিলাম।

সেবাদাতাদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি আজকে শুধু কাজ করলাম আমার এসিআর লিখিত হলো রাষ্ট্রকে জবাব দিলাম এবং সবশেষে এটা মাথায় রাখতে হবে আমার যে বিবেক আমার বিবেকের কাছে তো আমার জবাব দিতে হবে।

সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, প্রেসম্যানরা হচ্ছে হুইসেলব্লোয়ার। আমরা দুদকের যত মামলা মোকদ্দমা বিভিন্ন সময় আমরা নাড়াচাড়া করি অনুসন্ধান করি, তদন্ত করি, মামলা তৈরি করে আদালতে পেশ করি; আমি হিসেব করে দেখেছি তার ৫০ শতাংশের বেশি আছে যারা প্রেসম্যান, তাদের দেওয়া সংবাদকে। এখন সেই সংবাদ যথার্থ কিনা সেটা একসময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রমাণিত হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, জঙ্গলের আইন তো সভ্যতার আইন হতে পারে না। তাই দানবের গুণ মানুষের মধ্যে থাকতে পারে না। কিন্তু আমাদের এখানে আজকের যে আলোচ্য বিষয়, যে কারণে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি, অন্তত কিছু মানুষ তো তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কেন হয়েছেন সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়। আর যেন না হন। আপনারাও আশা করি এটাকে নিজেদের কর্তব্য হিসেবে মেনে নিয়ে এই ফল ত্যাগ করবেন।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যে দুর্নীতি যাতে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। সমাজের সর্বস্তরে দেখা যাচ্ছে যে যারা যতটুকু প্রাপ্য সেখান থেকে তাকে বঞ্চিত করতে পারাটাই যেন বাহাদুরি। আর এমন বাহাদুরি চলতে দেওয়া যায় না। কাজেই আমরা খেয়াল রাখব যে আমরা যেন যে দপ্তরেই কর্মসম্পাদন করি না কেন, যেন দুর্নীতি নিজে করব না, অন্যের দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেব না।

মূল্যবান উপহার না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতি সম্প্রতি আমরা আরেকটা বিষয়ের দিকে এগোতে যাচ্ছি সেটা হচ্ছে নো গিফট। এই নো গিফ এই এই চর্চাটা আমরা এখন থেকে করব। অতিথি আসলে আমরা তাকে আদর আপ্যায়ন করি। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা আছে সেই ক্ষেত্রে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করব। এমন উপহার গ্রহণ করবো না যা আমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করে।

গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগগুলো যশোর জেলার সব সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন।

গণশুনানিতে মোট ১০৪টি অভিযোগের মধ্যে দুদকের তফসিলভুক্ত ৭৫টি অভিযোগের শুনানি হয়। যার মধ্যে ১০টি অভিযোগ অনুসন্ধানে নেওয়া হয় এবং বাকি অভিযোগগুলো প্রতিবেদন দাখিল সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে।

এর আগে গণশুনানিতে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহব্যাপী মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, বুথ স্থাপন করে অভিযোগ সংগ্রহ, অভিযোগ বাক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুদকের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা হয়েছিল। গণশুনানিতে সরাসরি সেবা দাতা কর্মকর্তা-কর্মচারী, সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক, স্কাউট-বিএনসিসি উপস্থিত ছিলেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ