আজ : মঙ্গলবার ║ ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : মঙ্গলবার ║ ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২২শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে সংঘর্ষ, পাক সেনাদের ওপর আফগান বাহিনীর হামলা

দেশচিন্তা ডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শনিবার রাতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ভারী অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন, আর আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নতুন এক আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কায়।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতের দিকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় এই সংঘর্ষ শুরু হয়। আফগানিস্তানের সীমান্তরক্ষীরা প্রথমে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালায়। এর পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও। এই সংঘর্ষের পেছনে মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে পাকিস্তানের বিমান হামলা, যা ঘটেছিল এর আগের দিন (শুক্রবার রাতে) আফগান রাজধানী কাবুলে। ইসলামাবাদ দাবি করে, তারা পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি)-র প্রধান নেতা নূর ওয়ালী মেসুদকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই আফগান বাহিনী সীমান্তে আক্রমণ করেছে বলে দাবি করছে কাবুল।

দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে বিমান হামলা চালায়। হামলার লক্ষ্য ছিল টিটিপির শীর্ষ নেতা, যাকে পাকিস্তান বহু বছর ধরে খুঁজে আসছে। এই ঘটনার পরপরই দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে ওঠে। আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা পাকিস্তানের এই বিমান হামলার জবাবে সীমান্তে সামরিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আফগান প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তানের আগ্রাসনের প্রতিশোধে আমাদের সীমান্তরক্ষীরা পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।” এই সংঘর্ষের সময় ভারী গোলাবারুদ, মর্টার ও রকেট লঞ্চার ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। সংঘর্ষ এতটাই তীব্র ছিল যে, সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।

সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, আফগান সেনাদের অসংখ্য গাড়ি সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সেই সঙ্গে শোনা যাচ্ছে গোলাগুলির শব্দ ও ভারী যানবাহনের চলাচল। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা অবস্থান নিয়ে গুলি বিনিময় চালিয়ে যায়। এই দৃশ্যগুলো পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলে তোলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতজুড়ে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে, এবং আকাশে আগুনের গোলা দেখা যায়।

এ ঘটনার আগে থেকেই আফগানিস্তান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। আফগান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ১০ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তান কাবুলের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং পাকতিকা প্রদেশের মার্ঘা অঞ্চলের একটি মার্কেটে বোমাবর্ষণ করেছে। তিনি এ ঘটনাকে “আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন, সহিংস ও নিন্দনীয় কাজ” বলে উল্লেখ করেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে কাবুলে একটি বিকট বিস্ফোরণ ঘটে, এরপরই গোলাগুলির শব্দও শোনা যায়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে খবর যে পাকিস্তান এই হামলায় টিটিপির প্রধান নেতা নূর ওয়ালী মেসুদকে টার্গেট করেছে। তবে পরে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এই দাবি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, টিটিপির নেতা কাবুলে উপস্থিত ছিলেন না, এবং পাকিস্তানের বিমান হামলা কেবল “অযৌক্তিক আগ্রাসন” ছিল।

এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের সংখ্যা জানায়নি, তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়েছে। পাকিস্তান বলছে, তারা দেশের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া টিটিপি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে, অন্যদিকে আফগানিস্তান এটিকে তাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা হিসেবে দেখছে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরস্পরের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে শুরু করেছে, ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘর্ষ দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন সংকট সৃষ্টি করতে পারে। আফগানিস্তান এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি, আর পাকিস্তান তার নিজস্ব রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এই অবস্থায় দুই দেশের সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হলে এর প্রভাব শুধু সীমান্ত এলাকায় নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর পড়বে। বিশেষ করে টিটিপি বা অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর পুনরুত্থানের আশঙ্কা তৈরি হবে। তথ্যসূত্র : দ্য হিন্দু

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ