
মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার ছনখোলা এলাকায় ডাকাতের গুজব ছড়িয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে হত্যার ঘটনায় পাঁচদিন পর সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
শনিবার (৮ মার্চ) রাতে নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আবু ছালেক জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী এবং বিগত ২০২৪’র বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সম্মুখসারীর যোদ্ধা হিসেবে সম্পৃক্ত ছিল। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনের মামলা-হামলা ও জুলুম-নির্যাতনের কারণে দীর্ঘদিন এলাকায় আসতে পারেনি ছিলেন অন্যত্র আত্মগোপনে ছিল। ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতনের পর বাড়িতে ফিরে আসেন। আবু ছালেক এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক বিরোধ মীমাংসা করাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কে বা কারা জনৈক আব্দুল নুরের মালিকানাধীন একটি সিএনজি অটোরিক্সা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে আব্দুল নুর আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে অবহিত করলে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিন সিএনজি অটোরিক্সা পোড়ানোর বিষয়টি আব্দুল নুরসহ এলাকার আরো গণ্যমান্য লোকজন নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকালে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় একটি সালিশ বৈঠক করেন। ওই সালিশ বৈঠকে আব্দুল নুরের গাড়িতে কারা আগুন লাগিয়েছে তা শনাক্ত হয় এবং শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সিএনজির ক্ষতিপূরণ বাবদ সাত লক্ষ টাকা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, অভিযুক্তদের কয়েকজন ৩ মার্চ সন্ধ্যায় আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে সিএনজি পোড়ানোর ঘটনায় শনাক্তকৃত ব্যক্তিদের নিকট হতে ক্ষতিপূরণের টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে ছনখোলা পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে রাস্তার উপর যাওয়ার জন্য বলে। ওইদিন দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার সময় ছালেক ও তার বন্ধু নেজামহ আরও নয়জন সিএনজিযোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তখন তারা ঘটনাস্থলের পাশে থাকা জনৈক হারুনের চায়ের দোকানে বসে সিএনজি পোড়ানোর ক্ষতি পূরণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আলোচনা করার একপর্যায়ে বিবাদীগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী ছনখোলা পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছ বলে গুজব ছড়িয়ে এলাকার স্থানীয় লোকদেরকে উস্কে দিয়ে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে টানাহেঁচড়া করে হারুনের চায়ের দোকান হতে বের করে রাস্তার বিপরীত পাশে থাকা একটি টিনের ঘরে নিয়ে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় পিস্তল দ্বারা এলোপাতাড়ি গুলি করলে স্থানীয় ৫ জন ব্যক্তির শরীরে লেগে গুরুতর আহত হয় এবং পিস্তলটি রাস্তার উপর নেজাম উদ্দিনের লাশের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনের সুরতহাল করেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এজাহারনামীও আসামি’রা হলেন মোহাম্মদ হারুন (৫০), মোঃ মমতাজ (৪৫), মোঃ কামরুল ইসলাম (৫৩), আজিজুল হক (৫৫),(৫) নজরুল ইসলাম মানিক (৫২), মাহমুদুল হক (৫৫), আবু সামা (২৪),মোঃ সাজ্জাদ (২৫), মো. মিজান প্ৰকাশ পিচ্চি মিজান (৩১), মো. কফিল (৩০), সোহেল আহমদ (৩৮), মো. বেলাল (৩০), মো. হেলাল (৩৪), মো. হামিদ (৪৫), মো. ইছহাক (২৬), (মো. মোজাফ্ফর মেম্বার (৪২),প্রকাশ জুইনা (৩৫), মো. কমরু (৪৫), মো. সিফাত (২০), মো. সালাম (৫০), মো. আলম (৫০), মিজানুর রহমান মারুফ (৪১), রমজান আলী (৬০), হোসাইন কবীর (৫৫), মোঃ ইউনুছ (৫০), মো. নেজাম, মো. জসিম (৪৮), মো. ফারুক প্রকাশ কালা ফারুক (৪৮), মো. মোরশেদ (৪০), মো. শহিদুল্লাহ (৩২), সালা উদ্দিন (২০), মো. খোকন (৩৫), মো. এমরান (২৮), মো. খলিল (৪৫), সৌরভ হোসেন মিন্টু (৪৫), মো. মনি (৪৬), মুখলেচুর রহমান জাকের (৫৫), মো. মোর্শেদ (৪৮), মো. ওসমান (৫৫), আবু তাহের (৩৬), শাহজাহান প্রকাশ মীম (৫০), মো. কায়ছার (৩৮), মো. নাছিম (৪০), মো. ফয়সাল (২৪), নজরুল ইসলাম (৫২), মো. জহির (৫০) ও মো. জাকির হোসেন প্রকাশ কালা জাকির (৫০)। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, দুই জামায়াতকর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় একটি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ কাজ শুরু করবে।