
আমানত করিম, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিআইপি এমপি বলেছেন, আমার কোন পিএস এপিএস নেই। কারো মাধ্যম হয়ে নয়; আপনাদের সমস্যা অভিযোগ নিয়ে সরাসরি আমার কাছে আসবেন। আমার দরজা জনগনের জন্য সব সময় খোলা।
এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, বাঁশখালীর উপকূলীয় ছনুয়াঘাট আরসিসি হওয়ার বিষয়ে সব কাগজপত্র চলে এসেছে। ইনশাআল্লাহ ঘাট হয়ে যাবে। কুতুবদিয়া থেকে যে চ্যানেলে আপনারা বোট নিয়ে চলাচল করেন, সে সমস্যা সমাধানের জন্য টেম্পু স্থাপন করা হবে। ফেরির নতুন ভার্সন টেম্পু। ১০০ থেকে ২০০ জনের মতো মানুষ ও কয়েকটা গাড়ি চলাচল করতে পারবে এই টেম্পুর মাধ্যমে।
ছনুয়ার উন্নয়ন মানে বাঁশখালীর উন্নয়ন। যেহেতু ছনুয়া আমার প্রতিবেশী ইউনিয়ন। কারণ, ইসলামে বলা হয়েছে প্রতিবেশীর হক পূরণ করার জন্য। আগে যদি আমি প্রতিবেশীর হক পূরণ করতে না পারি, তাহলে আল্লাহকে কি জবাব দেব?’ শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে বাঁশখালীর ছনুয়া কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা- শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘বাঁশখালীর শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি উপরোক্ত কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমি এই মাঠে বলেছিলাম, স্মার্ট বাঁশখালী নয়, স্মার্ট ছনুয়া উপহার দেব আপনাদেরকে। সেই হিসেবে আমার দায়িত্ব আমি পালন করে যাচ্ছি। আমি বিগত তিন মাসে ছনুয়ায় ৩৭ লক্ষ টাকা মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য দিয়েছি। ১৪ লক্ষ টাকা টিআর-কাবিখার জন্য দিয়েছি। এছাড়া ৭টি টিউবওয়েল দিয়েছি এবং সরকার বাজার ব্রীজের জন্য টিআর-কাবিখা থেকে ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছি। এবং সেই প্রজেক্টের সভাপতি করেছি আমার বড় ভাই আজিজুর রহমানকে। কেন করেছি? সেটা করেছি একটি মাত্র কারণ ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা যদি বাজেটই দিই, কিন্তু ওখানে আরও ২-৪ লক্ষ টাকা ঘাটতি পড়বে। তখন ভাইকে বললাম আমি এই টাকাটা দিয়েছি, বাকি টাকাটা তুমি দিও। আমাকে আশ্বস্ত করেছেন বাকি টাকা উনি দিবেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই ব্রীজটার কাজ আমি করে দেব টিআর-কাবিখা থেকে। শেখেরখীল রাস্তারমাথা থেকে ছনুয়া মনুমিয়াজী ঘাট পর্যন্ত যে রাস্তাটা আছে, এই রাস্তাটা ১৮ ফুট প্রসস্থ করা হবে। এরপর কুতুবদিয়া ও ছনুয়ার মানুষের যাতায়াতের জন্য কোস্টার সার্ভিস চালু করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে বলে যাচ্ছি, আমার কোনো পিএস-এপিএস নেই। আপনারাই আমার পরিবার। আপনাদের কোনো সমস্যা হলে চেয়ারম্যান সাহেব আছে, না পারলে আমাকে বলবেন। আমি চেষ্টা করবো। আমাকে না পারলে আমার সাতটা ভাই আছে। আল্লাহ আমাকে সাতটা ভাই দান করেছেন। অন্ততপক্ষে একজন না আরেকজনের কাছে যেতে পারবেন। লস্কর মৌলভী সড়ক সহ কয়েকটি সড়কের টেন্ডার হয়ে গেছে। আরও তিন-চারটি রাস্তা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।’
‘আমি চাই এই ছনুয়ার প্রত্যেকটি রাস্তা যেন উন্নয়নে দৃশ্যমান হয়। আমি ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার টিআর-কাবিখা পেয়েছি। যেটা সামনে বরাদ্দ আসবে। প্রথমে আমি আমার ইউনিয়নে একটু বেশি দিয়েছি। পুঁইছড়িতে আমি ২১টি ছোট ছোট রাস্তা দিয়েছি। কেন দিয়েছি? এই টিআর-কাবিখা এর আগে অনেকে পেয়েছে। ১৯৯১ সালে আমি ভোটার হয়েছি। এরপর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একজন এমপি বছরে ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা টিআর-কাবিখা পায়। সেই হিসেবে পাঁচ বছরে ২০ কোটি টাকা। আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি আগামীতে টিআর-কাবিখা বরাদ্দ দিলে ওপেন করে দেব কোন জায়গায় কি দিয়েছি। আমি গোপনে কিছু করবো না। অতীতে কে কি করছে না করছে সেদিকে আমি যাবো না। আমার জায়গা থেকে আমি শতভাগ স্বচ্ছ থাকবো। শুধু আমার আপনাদের দোয়াটা দরকার। এত বেশি কিছু দরকার নেই। ১৯৯১ সাল ১৯৯৬ সাল থেকে এই এলাকার কৃতি সন্তান সুলতানুল কবির চৌধুরী এমপি হয়েছিলেন। তখন আপনাদের একটা মূল্যায়ন ছিল। এরপর থেকে আমরা ভোট দিয়ে দিয়েছি উত্তর দিকে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শুধু ভোটের জন্য আসছে।’
‘আমি চাই এই উত্তর-দক্ষিণ ভেদাভেদের এই রেকর্ড ভাঙার জন্য। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আপনারাও এই যুদ্ধে সামিল হোন। কেউ যদি বলে অমুখে দুর্নীতি করছে, তাহলে সরাসরি আমার কাছে আসবেন। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তাতে আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই শুধু পিছিয়ে পড়া বাঁশখালীকে কিভাবে এগিয়ে দেওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জুনে অর্থবছর আসবে। সেই অর্থবছরে এই ছনুয়ায় যতো রাস্তা আছে, সেগুলোর উন্নয়নের জন্য আমার বরাদ্দের ৭০% এই ছনুয়ার মানুষের জন্য উৎসর্গ করবো। এটা আমি বলে যাচ্ছি আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন। এই মাঠে আমার নির্বাচনের আগে অর্থাৎ উপজেলা নির্বাচনের সময় গালীবের নির্বাচনী জনসভায় এই এলাকার মানুষের দাবি ছিল একটি হাই স্কুল। আমি সেই সময় একমত পোষণ করেছিলাম। এই সমস্যা এখনোও সমাধান হয়নি।’
এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং, স্কুল অবশ্যই করতে হবে। আমি আপনাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা এগিয়ে আসেন। আমি আপনাদের সাথে আছি।
কুতুবদিয়া চ্যানেলে জেলেদের সংকট নিরসনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলেদের নিয়ে নৌবাহিনীর সাথে যে সমস্যা, সে সমস্যা সমাধানের জন্য কোস্টগার্ডের পূর্বাঞ্চলের যিনি অধিনায়ক আছেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল জহির। উনাকে সহ বাংলাবাজার ও শেখেরখীলের জেলেদেরকে নিয়ে ওপেন মতবিনিময় সভা করেছিলাম। তারা বলেছিল যে কোস্ট গার্ড কোনো ডিস্টার্ব করবে না। আর যেকোনো সমস্যা তাদেরকে ফোন করার জন্য বলেছেন। আপনারা যারা জেলে সম্প্রদায় আছেন, তাদেরকে মনে হয় তখন ফোন নাম্বারও দিয়েছিল। যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে বলবেন। বাকিটা আমি ওদের সাথে যোগাযোগ করবো।’