চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়। চান্দ্র মাস হওয়ায় প্রতি বছরই দেশে দেশে রমজান মাস শুরুর ক্ষেত্রে দু-এক দিনের হেরফের হয়। একেকটি দেশে এমনটা যে শুধু মাস শুরুর ক্ষেত্রেই হয়, তা কিন্তু নয়। রোজাদারেরা কত ঘণ্টা রোজা রাখবেন, পার্থক্য হয় সেই সময়েরও। খবর: আল জাজিরা।
বিশ্বজুড়েই দিনব্যাপী রোজা রাখা হয় সাধারণত ১২ থেকে ১৭ ঘণ্টা। একজন রোজাদার পৃথিবীর কোন স্থানে অবস্থান করছেন, তার ওপর ভিত্তি করে রোজা রাখার সময়ে এই পার্থক্য হয়ে থাকে।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, আজ থেকে ১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন প্রথম অবতীর্ণ হয় রমজান মাসেই।
একজন মুসলিমকে ফজরের নামাজের সময় শুরু হওয়া থেকে মাগরিবের নামাজের সময় শুরুর আগপর্যন্ত অর্থাৎ সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনব্যাপী রোজা রাখতে হয়। এই সময়ে খাবার ও পানীয় গ্রহণ, ধূমপান ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকতে হয় তাকে। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহর ভয় ও তাঁর নৈকট্য অর্জন করার সুযোগ পান রোজাদার ব্যক্তি।
প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন তারিখে কেন রোজা শুরু
প্রতি বছর রমজান মাস পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ১০ থেকে ১২ দিন এগিয়ে আসে। এর কারণ, ইসলামি ক্যালেন্ডারে মাসের হিসাব করা হয় হিজরি চান্দ্র বর্ষ অনুযায়ী। চান্দ্র বর্ষে একেকটি মাস ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে।
পৃথিবীর সর্ব দক্ষিণের দেশগুলো, যেমন- চিলি বা নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলিমরা এ বছর প্রায় ১২ ঘণ্টা রোজা রাখছেন। বিপরীতে, সর্ব-উত্তরের দেশগুলো, যেমন আইসল্যান্ড বা গ্রিনল্যান্ডে রোজাদারেরা সাওম (রোজা) পালন করছেন ১৭ ঘণ্টার কিছু বেশি।
চান্দ্র বর্ষ সৌরবর্ষের চেয়ে ১১ দিন কম হওয়ায় ২০৩০ সালে রমজান মাস পালন করা হবে দুবার। ওই বছর প্রথম রমজান মাস শুরু হবে ৫ জানুয়ারি। আর ২৬ ডিসেম্বর শুরু হবে দ্বিতীয় রমজান মাস। এবারের মতো ১২ মার্চের পর আবারও রমজান মাস শুরু হবে এখন থেকে ঠিক ৩৩ বছর পর। সালটি হবে ২০৫৭।
দেশে দেশে রোজা পালনের ঘণ্টা
দিন কত ঘণ্টার হবে, সে বিষয়ে বিশ্বজুড়ে পার্থক্য রয়েছে। পৃথিবীর সর্ব দক্ষিণের দেশগুলো, যেমন চিলি বা নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলিমরা এ বছর প্রায় ১২ ঘণ্টা রোজা রাখছেন। বিপরীতে সর্ব-উত্তরের দেশগুলো, যেমন আইসল্যান্ড বা গ্রিনল্যান্ডে রোজাদারেরা সাওম (রোজা) পালন করছেন ১৭ ঘণ্টার কিছু বেশি।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বসবাসরত মুসলিমরা এ বছর কিছুটা কম সময় রোজা রাখছেন। ২০৩১ সাল পর্যন্ত তাদের রোজা রাখার এ সময় একটু একটু করে কমবে। ওই বছর শীতের মধ্যে রোজা রাখবেন তারা। বছরের সবচেয়ে ছোট দিনও হবে সেবারের রমজান মাসে। এরপর ধীরে ধীরে তাদের রোজা রাখার সময় বাড়বে। এমন একসময় আসবে, যখন বছরের সবচেয়ে বড় দিনে রোজা রাখবেন তারা।
এদিকে পৃৃথিবীর বিষুবরেখার দক্ষিণে বসবাসরত মুসলিমদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটছে এর উল্টো। পৃথিবীর একেবারে উত্তরের শহরগুলো, যেমন নরওয়ের লংইয়ারবেনে ২০ এপ্রিল থেকে ২২ আগস্ট সূর্যাস্ত দেখা যায় না। শহরগুলোর মুসলিম বাসিন্দাদের সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরী বা কাছাকাছি কোনো মুসলিম দেশের সময়সূচি অনুযায়ী রোজা রাখতে হয়।
যে শহরগুলোতে ইফতারের সময় একই
ভোররাতে যে খাবার খেয়ে মুসলিমরা রোজা পালন শুরু করেন, তা সেহরি বা সুহুর বলে পরিচিত। অন্যদিকে দিন শেষে যে খাবার খেয়ে তারা রোজা পালন শেষ করেন, সেটি পরিচিত ইফতার নামে।
পৃৃথিবীর একই দ্রাঘিমাংশে থাকা শহরগুলোতে ইফতারের সময় হয় একই রকম। এই শহরগুলোর বাসিন্দারা যখন ইফতারের প্রস্তুতি নেন, তখন পৃথিবীর উল্টো দিকের শহরের বাসিন্দারা নেন সেহরির প্রস্তুতি।
সবচেয়ে দীর্ঘ ও স্বল্প সময় রোজা রাখা হয় যেসব শহরে
বিশ্বের যেসব শহরের বাসিন্দারা গড়ে সবচেয়ে বেশি সময় ও গড়ে সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখেন, তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। যদিও দিনের পরিবর্তন ও গণনা পদ্ধতির পার্থক্যের কারণে এসব স্থানে রোজা রাখার প্রকৃত সময়ে কিছুটা হেরফের রয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের নুক : ১৬ ঘণ্টা। আইসল্যান্ডের রেকজাভিক: ১৬ ঘণ্টা। ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি: ১৫ ঘণ্টা। নরওয়ের অসলো: ১৫ ঘণ্টা। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো: ১৫ ঘণ্টা। জার্মানির বার্লিন: ১৫ ঘণ্টা। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন: ১৫ ঘণ্টা। রাশিয়ার মস্কো: ১৫ ঘণ্টা। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম: ১৫ ঘণ্টা। পোল্যান্ডের ওয়ারশ: ১৫ ঘণ্টা। কাজাখস্তানের আস্তানা: ১৫ ঘণ্টা। বেলজিয়ামের ব্রাসেলস: ১৪ ঘণ্টা। যুক্তরাজ্যের লন্ডন: ১৪ ঘণ্টা। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ: ১৪ ঘণ্টা। সুইডেনের স্টকহোম : ১৪ ঘণ্টা।
রোমানিয়ার বুখারেস্ট: ১৪ ঘণ্টা। বুলগেরিয়ার সোফিয়া: ১৪ ঘণ্টা। ইতালির রোম: ১৪ ঘণ্টা। স্পেনের মাদ্রিদ: ১৪ ঘণ্টা। ফ্রান্সের প্যারিস: ১৪ ঘণ্টা। পর্তুগালের লিসবন: ১৪ ঘণ্টা। তুরস্কের আঙ্কারা:১৪ ঘণ্টা। কানাডার অটোয়া: ১৪ ঘণ্টা। জাপানের টোকিও: ১৪ ঘণ্টা। চীনের বেইজিং: ১৪ ঘণ্টা। গ্রিসের এথেন্স: ১৪ ঘণ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক: ১৪ ঘণ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি: ১৪ ঘণ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস: ১৪ ঘণ্টা। তিউনিসিয়ার তিউনিস: ১৪ ঘণ্টা। আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স: ১৪ ঘণ্টা। ইরানের তেহরান: ১৪ ঘণ্টা। আফগানিস্তানের কাবুল: ১৪ ঘণ্টা। ভারতের নয়াদিল্লি: ১৪ ঘণ্টা। বাংলাদেশের ঢাকা: ১৪ ঘণ্টা। মরক্কোর রাবাত: ১৪ ঘণ্টা। সিরিয়ার দামেস্ক: ১৪ ঘণ্টা। পাকিস্তানের ইসলামাবাদ: ১৪ ঘণ্টা। ইরাকের বাগদাদ: ১৪ ঘণ্টা। লেবাননের বৈরুত: ১৪ ঘণ্টা। জর্ডানের আম্মান: ১৪ ঘণ্টা। ফিলিস্তিনের গাজা: ১৪ ঘণ্টা। মিসরের কায়রো: ১৪ ঘণ্টা।
কাতারের দোহা: ১৩ ঘণ্টা। আরব আমিরাতের দুবাই: ১৩ ঘণ্টা। সুদানের খার্তুম: ১৩ ঘণ্টা। সৌদি আরবের রিয়াদ: ১৩ ঘণ্টা। নাইজেরিয়ার আবুজা: ১৩ ঘণ্টা। ইয়েমেনের এডেন: ১৩ ঘণ্টা। সেনেগালের ডাকার: ১৩ ঘণ্টা। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা: ১৩ ঘণ্টা। আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেস: ১৩ ঘণ্টা। শ্রীলঙ্কার কলম্বো: ১৩ ঘণ্টা। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর: ১৩ ঘণ্টা। সোমালিয়ার মোগাদিসু: ১৩ ঘণ্টা। কেনিয়ার নাইরোবি: ১৩ ঘণ্টা। জিম্বাবুয়ের হারারে:১৩ ঘণ্টা। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা: ১৩ ঘণ্টা। অ্যাঙ্গোলার লুয়ান্ডা: ১৩ ঘণ্টা। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক: ১৩ ঘণ্টা। ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়া: ১৩ ঘণ্টা। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ: ১৩ ঘণ্টা। উরুগুয়ের মন্টেভিডিও:১৩ ঘণ্টা। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা: ১৩ ঘণ্টা। চিলির পুয়ের্তো মন্টে: ১৩ ঘণ্টা। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চ: ১৩ ঘণ্টা।