
আবদুল্লাহ মজুমদার : শেষ হয়ে গেলো বইমেলা! কিন্তু বই-এর ঘ্রাণ এখনও যায়নি মন-মস্তিষ্ক থেকে। তার-ই ধারাবাহিকতায় এখনও হাতে আসছে বই। হাতে পেলাম রহিমা মৌ-র দু’টি বই। একাকী আমি” ও অরণ্য এবং “ভাষা আন্দোলনে নারী”। রহিমা মৌ সম্পর্কে একটু বলি- এ লেখকের সাথেও আমার পরিচয় ফেসবুকে। যদিও বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা পাঠে নামের সাথে পরিচয় বহু আগেই।
একজন বিনয়ী, সৎ ও সংগ্রামী একজন লেখক। সাহিত্যের নানা শাখায় যার অবাধ বিচরণ। তার সবগুলো বই রয়েছে আমার কাছে। শুধু আমি নই আমার কন্যারাও রহিমা মৌ-র পাঠক, অর্থাৎ লেখক সম্পর্কে জানে,চিনে এবং তাদের সাথে আলাপও হয়েছে। এবার আসি আসল কথায়।
আজ কথা বলছি- “ভাষা আন্দোলনে নারী ভাষাকন্যারা” গ্রন্থ নিয়ে। রহিমা আক্তার মৌ- এর গবেষণাধর্মী গ্রন্থে ২১ জন ভাষাকন্যাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখায় ভরপুর এ গ্রন্থে মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক ও অনুবাদক আবুল কাইয়ুম রহিমা আক্তার মৌ এর বই প্রসঙ্গে বলেন-
কবি নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত উক্তি- ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। আমাদের যা কিছু সংগ্রাম, যা কিছু অর্জন সবটাতেই শক্তিরূপিণী মা-বোনদের অবদান অনস্বীকার্য।
তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেপথ্য থেকে প্রেরণা- দুটোই আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পাথেয়। ভাষা আন্দোলনে নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি রাজপথে মিছিলে-শ্লোগানে সরব ছিল। শুধু তাই নয়, কয়েকজন অকুতোভয় নারী নেতৃত্ব দিয়ে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেছিলেন।
সেই মহীয়সী নারীদেরই জীবনবৃত্তান্ত ও অবদান নিয়ে হাজির হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা-দুহিতা ও বিদগ্ধ সাহিত্যিক রহিমা আক্তার মৌ। ‘ভাষা আন্দোলনে নারী: ভাষাকন্যারা’- এই একক গ্রন্থে একুশজন নারী ভাষাযোদ্ধা সম্পর্কে গবেষণাধর্মী, বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা উপহার দিয়েছেন তিনি। মহান একুশের বীর নারীদের জীবন ও সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রেক্ষাপটসহ পুরো ভাষা আন্দোলনের সময়টিকেও অত্যন্ত সুচারু ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। গ্রন্থটি লেখিকার অনেক সাধনা ও শ্রমের ফসল। ভাষা আন্দোলনে নারীসমাজের অবদান নিয়ে বাংলাভাষায় এ ধরনের উন্নত মানের গ্রন্থ খুব অল্পই রচিত হয়েছে।
আমার বিশ্বাস, এই অনন্য গ্রন্থ নিঃসন্দেহে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলোর পাঠকদের জন্য ভাষা আন্দোলনে নারীদের সংগ্রামী ভূমিকা ও ত্যাগের মহিমা সম্পর্কে জানার যথেষ্ট সুযোগ করে দেবে। ”
পরিশেষে, এমন একটি সমৃদ্ধ ও প্রদীপ্ত কাজের জন্য লেখিকাকে সাধুবাদ জানাই।
লেখক এ গ্রন্থে যেসব ভাষাকন্যাদের নিয়ে লিখেছেন, তারা হলেন- আনোয়ারা খাতুন, কাজী খালেদা খাতুন (ডা.), চেমন আরা (অধ্যাপক), জোবেদা খানম/খাতুন চৌধুরী, নাদেরা বেগম, নিবেদিতা নাগ, নূরজাহান মুরশিদ, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, মনোয়ারা ইসলাম, মমতাজ বেগম, রওশন আরা বাচ্চু, রিজিয়া খাতুন, লায়লা নূর (অধ্যাপক), শরিফা খাতুন (ড.) (অধ্যাপক), শাফিয়া খাতুন (ড.), সারা তৈফুর, সুফিয়া কামাল, সুফিয়া আহমেদ (জাতীয় অধ্যাপক), সৈয়দা শাহার বানু, হামিদা রহমান, হালিমা খাতুন (ড.) প্রমুখ।
একজন গৃহিণী ও সমাজচিন্তক লেখক রহিমা মৌ-এর এ কাজের জন্য নারী সমাজে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলো একথা খুব সহজেই বলা যায়।
রহিমা আক্তার মৌ-একাধারে সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও ফিচার লেখক। বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে লেখা লিখে আসছেন। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে, ইত্তেফাক গ্রুপের সাপ্তাহিক ‘রোববার’ এ। ঢাকা ও ঢাকার বাহির থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনেও লিখছেন। মুলত দৈনিক পত্রিকায় লিখেই আনন্দ পান বেশি।
১৯৭৫ খৃষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট-এ বাবার কর্মস্থলে। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বানসা গ্রামে। মা সেতারা বেগম, বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান। চার ভাই-বোনের মাঝে তিনি দ্বিতীয়। শৈশব কাটে নোয়াখালীর চাটখিলে। ১৯৯৪ সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ডায়নার পারের হাম্মদ হোসেন ও কহিনুর বেগম এর বড় সন্তান প্রকৌশলী মো: কামরুল আহসান-এর সাথে। বিবাহিত জীবনে দুই কন্যা সন্তানের জননী। প্রিয় ব্যক্তিত্ব মা সেতারা বেগম।
ভালোবাসেন রাত জেগে আকাশ দেখতে, আকাশের সাথে কথা বলতে। জেগে থাকা স্বপ্নগুলো আকাশের সাথে শেয়ার করতে। স্বপ্নের নগরী ঢাকা। চিঠি লেখা তাঁর একটি সখ। সম্পাদনা করছেন চিঠি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘আকাশের ঠিকানায় চিঠি’।
সম্মাননা পেয়েছেন – বাঙ্গালী কন্ঠ পুরস্কার (২০১৮); কচিপাতা ম্যাগাজিন পুরস্কার (২০১৯); কথা সাহিত্যে কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার (২০১৯); মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার (২০২০) এবং একাত্তর ও নারী বইয়ের জন্য সম্মাননা (২০২৩)
ভাষাকন্যা রওশন আরা বাচ্চুকে উৎসর্গকৃত সজীব ওয়ার্সীর প্রচ্ছদে কলি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থটি রকমারিতেও পাওয়া যাবে। চাইলে লেখকের কাছ থেকেও সরাসরি সংগ্রহ করতে পারবেন।
লেখক : কবি ও সাহিত্য সমালোচক