
এস এম জাকারিয়া, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : দুয়ারে করঘাত করছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখন সারা দেশের মত চট্টগ্রাম-১ মীরসরাই আসনেও চলছে নির্বাচন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন। প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে অনেকে ছুটে এসেছেন প্রবাসীরাও।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলার অনেক মানুষ জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেক দেশে থাকাকালীন ছাত্র রাজনীতি ও রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তাঁরা দেশে এসে প্রচার-প্রচারনা ও গনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদের বেশিরভাগ ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন প্রতিক বরাদ্ধের পর।
এবারারের নির্বাচনে মীরসরাই আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে দুজনের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী, দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল (নৌকা) এর সাথে হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধ হবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের (ঈগল) সাথে। প্রবাস থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা এদুজনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বেশী প্রবাসী দেশে এসেছেন।
জানা গেছে, প্রবাসীরা নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এলাকাবাসীর ভোট নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দিতে গনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তারা এলাকায় বিভিন্ন দান-অনুদান দেয়া সহ সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট টানতে তারা কাজ করছে।
জীবিকার তাগিদে বর্তমানে দুবাই প্রবাসী এক সময়কার তুখোড় ছাত্রনেতা ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতিকের নির্বাচনের জন্য তিনি দেশে ফিরেছেন । নুর মোহাম্মদ বলেন, আমার মত প্রবাসে থাকা সাবেক অনেক ছাত্রনেতা নির্বাচনের জন্য দেশে এসেছেন। আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াসের ঈগল প্রতিকের জন্য প্রচার-প্রচারনা, গনসংযোগ করে যাচ্ছি। ঈগলের গনজোয়ার উঠেছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে মীরসরাইয়ে ঈগলের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেনা।
মীরসরাই সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম মীরসরাই সমিতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি দেশে এসেছেন। এরপর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের জন্য নৌকা প্রতিকে ভোট চেয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে দেশে এসেছি। মীরসরাই আসনে মাহবুব উর রহমান রুহেলকে নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। প্রতিক বরাদ্ধের পর থেকেই প্রতিদিন উনার সাথে গনসংযোগে করছি। দেশে আসার পর নিজ বাড়িতে ঠিকমত খাওয়া-দাওয়াও করতে পারিনি। সারাক্ষণ নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। মানুষের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছি, এখানে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা, কাতার প্রবাসী হাজী আনোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের ঈগলের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিতে গত ২৭ ডিসেম্বর দেশে এসেছেন। তিনি বলেন – উনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগন উনার সাথে রয়েছেন। ৭ জানুয়ারি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ঈগলের বিজয় সুনিশ্চিত।
আরেক প্রবাসী ৬নং ইউনিয়ন ইছাখালীর বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম খোকন জানান, মোশাররফ ভাই আমাদের বটবৃক্ষ। তিনি দীর্ঘ ৫৪ বছর মীরসরাইয়ের জন্য অনেক কিছু করেছেন। এবার উনার ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেলকে নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন।
আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল বলেন, প্রবাসীরা আমাদের বড় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাদের ভূমিকা অনেক বড়। এবারের নির্বাচনে নৌকার জন্য কাজ করতে অনেক প্রবাসী দেশে এসেছেন। তারা আমার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার অনেক কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্খী ভাই-বন্ধু প্রবাসে রয়েছেন। তারা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার কারণেই আমার নির্বাচনে সেখানে বসে থাকতে পারেনি, ছুটে এসে মানুষে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তারা। মানুষ ঈগল প্রতিকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। জনগনের ভোটে আমি বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার মোট জনসংখ্যা চার লাখ ৭১ হাজার ৭৫২ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৫ জন। পুরুষ ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪১। মহিলা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গ ২। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৬টি।