আজ : বুধবার ║ ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বুধবার ║ ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মহান বিজয়ের পথ ধরে আগামীর ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশ’’

বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ  : বিজয়ের ৫২তম বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই বিশ্বের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার এক দেশ। এ গর্ব বাঙালির। আমরা এখন এগিয়ে যাচ্ছি ২০৪১ সালের সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত এক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের দিকে।

 

১৯৭১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর, আল-শামসদের সহযোগিতায় দেশের মেধাবী, শ্রেষ্ঠ সন্তান, বুদ্ধিজীবীদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। আজকের এই দিনে সেসকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, শ্রদ্ধা সাথে আরো স্মরণ করছি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী বীর সন্তানদের, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নেতাকে, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোন, দেশের জন্য, বাংলা ভাষার জন্য হাসি মুখে জীবন বিসর্জনকারী প্রতিটি মানুষকে।

 

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে হাত দেন জাতির পিতা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে থেমে যায় সেই প্রক্রিয়া। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ’৭৫-পরবর্তী সময়ে দেশ আবার পাকিস্তানী ভাবধারার দিকে চলতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

 

আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দ্বিতীয় পদ্মা ও যমুনা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত নগর-জনপদ গড়ে উঠা, রাজনীতি থেকে হিংসা, হানাহানি, দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনা, এবং একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ক্লাসরুম, ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন থেকে শুরু করে সরকারি প্রায় সব ধরনের সেবা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়া, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স খাতেও দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন, অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির বিল পরিশোধ করা, ই-পর্চা, ই- মিউটেশন, ই-পাসপোর্ট, ই-চালান, ই-টেন্ডার, ইএফটি, ই-নথি, অনলাইনে পেনশনভাতাসহ নানা সেবার কারণে মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ভারতের সাথে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ, ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু, দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ, প্রায় লক্ষাধিক মসজিদভিত্তিক মকতব প্রতিষ্ঠা, খতিব-ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের জাতীয় স্কেলে বেতন নির্ধারিতকরণ, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, ভারতের সাথে স্থলসীমা (ছিটমহল) সমস্যা সমাধান, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড বিতরণ, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী টার্নেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীতকরণ, কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে।

 

একসময় যেদেশগুলো বাংলাদেশকে অগ্রাহ্য করতো আজ তারাই নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্যে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও মর্যাদার। কিন্তু দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারণে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার পথে বার বার বাঁধা তৈরি হচ্ছে। যদি দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা না যায়, তাহলে স্বাধীনতার প্রত্যাশা পূর্ণতা পাবে না। শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তির সাফল্য সম্ভব নয়। দুর্নীতি আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। মানুষের মধ্যে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আদর্শ ও নৈতিকতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সকলকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে।’

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘‘পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।’’ অসংখ্য প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে একটি টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশ’’ এই প্রত্যাশা।

লেখক : প্রবন্ধকার ও মুক্তিযোদ্ধা
সাবেক কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড, চট্টগ্রাম।
সাবেক যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ