
ভাটারার কুড়িলের পিনাকল পাম্প সংলগ্ন প্রগতি সরণির ক-৮৫ নম্বর বাড়ি। তিনতলা। নিচতলায় প্রবেশ করতেই গা ছমছমে ভাব। দুই সারিতে ৮টি কক্ষ। সবকটির দরজাতেই ঝুলছে তালা। একটি কক্ষেও নেই কোনো ভাড়াটিয়া। নেই কোনো বাতি। একেই বাইরে থেকে এখানে আলো প্রবেশের সুযোগ নেই, ভেতরেও কোথাও কোনো বাতি না থাকায় দিনের বেলাতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। যেন ভুতুড়ে বাড়ি। গত শনিবার রাতে অন্ধকার এসব কক্ষ থেকে পাঁচ কিশোরীকে উদ্ধার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ।
পারিবারিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে বাসা থেকে বেরিয়ে আসা কিশোরীদের চাকরিসহ বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে এ কক্ষগুলোতে আটকে রাখতেন দেওয়ান রসুল হৃদয়। ২৫ বছর বয়সী এ যুবক এর পর যাকে খুশি তাকে তিনতলায় নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করতেন। এভাবে এ পর্যন্ত এ যুবক অর্ধ শতাধিক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছেন। তার কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ৮টি সাউন্ডবক্স রয়েছে। ধর্ষণ করার সময় কেউ যেন কিশোরীদের আর্তচিৎকার শুনতে না পায়, সে জন্য উচ্চ আওয়াজে গান বাজানো হতো। তাকেও গতকাল সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ হীনকর্মে হৃদয়কে সহায়তা করতেন তার এক বান্ধবী যার বিষয়ে পুলিশ বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছে, চলছে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে এ নারীর পরিচয়ের সূত্রেই তারা ফাঁদে পড়ে। পুলিশের বাড্ডা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এলিন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, বিভিন্ন সমস্যায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কিশোরী মেয়েদের টার্গেট করে হৃদয়। তাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় নিয়ে আসত সে। তার পর কৌশলে আটকে রেখে ধর্ষণ করত। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা হয়েছে। এর আগেও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে হয়েছিল হৃদয়ের, জানান বাড্ডা জোনের এসি। বলেন, এই মামলায় তাকে রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ জানায়, হৃদয়ের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। কুড়িল বিশ্বরোডের বাড়িটি তার বাবা রুহুল আমিন দেওয়ানের। এ বাড়ির দোতলা এবং তিনতলার কয়েকটি কক্ষে ভাড়াটিয়া রয়েছে। বাড়ির সব ভাড়া হৃদয় নিজেই সংগ্রহ করে। বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে গিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসা বা ছেড়ে আসা কিশোরীদের সন্ধান করে সে। তা ছাড়া ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে গিয়েও এ ধরনের কিশোরীর খোঁজ করে। তার পর তাদের আবাসনের ব্যবস্থা এবং চাকরির প্রলোভন দেখায়। এ প্রলোভনের ফাঁদে ফেলেই সে কিশোরীদের তার বাসায় নিয়ে আসে। এ কাজে তাকে সহায়তা করত তার সেই বান্ধবী। উদ্ধার হওয়া পাঁচ কিশোরীকেও তার বান্ধবীর মাধ্যমে বাসায় নিয়ে এসেছিল হৃদয়।
হৃদয়ের পরিবার সম্পর্কে পুলিশ জানায়, হৃদয়ের বাবা রুহুল আমিনের নেশা বিয়ে করা। তার বাবা ৯টি বিয়ে করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় ২০ বছর আগে হৃদয়ের মা তাকে রেখে দেশের বাইরে চলে যান।
অভিযানে অংশ নেওয়া ভাটারা থানার এসআই আপেল মাহমুদ জানান, তিনতলায় হৃদয়ের নিজের একটি কক্ষ রয়েছে। সেটি বিলাসবহুল নানা উপকরণে সাজানো। সেখানে একটি বক্স খাট রয়েছে। কক্ষজুড়েই রয়েছে বড় বড় সাউন্ড বক্স।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হৃদয় নিজেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিত। এসব প্রতিষ্ঠানে সে কিশোরী মেয়েদের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাত। আর ধর্ষণের পর কিশোরীদের হুমকি দিয়ে বলত, থানা পুলিশ তার কেনা। সেখানে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে লাভ নেই। ধর্ষণের শিকার কিশোরীরা ভয়ে পুলিশকে কিছুই জানাত না। তা ছাড়া পরিবার ছেড়ে এসে ধর্ষণের শিকার হওয়ার ফলে লজ্জায় বিষয়টি পরিবারকেও জানাত না কিশোরীরা।