আজ : মঙ্গলবার ║ ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : মঙ্গলবার ║ ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১০ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

জামিনে মুক্তি পেল ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা

দেশচিন্তা ডেস্ক:  টেকনাফের আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাসের রোষের শিকার হন কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা। সংবাদ প্রকাশের জেরে একের পর এক তার বিরুদ্ধে করা হয় ছয়টি মামলা। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দৈনিক জনতার বাণীর সম্পাদক ফরিদুল।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার জেলা যুগ্ম দায়রা জজ ১ম আদালত ফরিদুল মোস্তফাকে জামিন দেন।এর আগে আরো ৫টি মামলায় জামিন পান এই সাংবাদিক। সব শেষ যে মামলায় তার জামিন হয় এটি ছিল চাঁদাবাজির মামলা। গত বছরের ৬ জুলাই বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ফরিদুলের প্রধান আইনজীবী আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা টেকনাফ ও কক্সবাজারের মাদক ইয়াবা কারবারীদের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততা নিয়ে সিরিজ সংবাদ প্রকাশ করেন। এর জের ধরে ফরিদুল মোস্তফাকে নিধন মিশনে নামেন ওসি প্রদীপ দাশ। ফরিদ মোস্তফাকে যেখানে পাবে সেখানেই ক্রসফায়ারের ঘোষণা দেয়া হয়। তাই প্রাণের ভয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না ফরিদুল মোস্তফার। গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর মোবাইল ট্রাকিং করে রাজধানীর মিরপুর পল্লবী এলাকার ভাড়া বাসা থেকে আটক করে তাকে টেকনাফে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওসি প্রদীপের হেফাজতে তিনদিন আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। পানির বদলে প্রসাব আর না খাইয়ে চোখে মরিচের গুড়া দিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত করা হয়েছিল। হাত পায়ের নখ প্লাস দিয়ে টেনে উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এদিকে ফরিদুলের বিরুদ্ধে করা এসব মামলা পরিচালনা করাসহ নানা কারণে চরম কষ্টে দিন পার করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এতদিন নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের। এমনকি নানা জায়গায় প্রতিকার চেয়েও রেহাই পাননি বলে অভিযোগ ফরিদুলের পরিবারের।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার পরিবারের অভিযোগ, ‘টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি’ সংবাদ প্রকাশ করায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ওসি প্রদীপের নিজস্ব বাহিনী দিয়ে ঢাকা থেকে ধরে এনে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের উপর চালানো হয় লোমহর্ষক নির্যাতন। পরে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবা, বিদেশি মদসহ ৬টি সাজানো মামলা দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে। পরে আদালতে হাজির করলে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় ফরিদুলকে।
ফরিদুল মোস্তফার স্ত্রী হাসিনা আক্তার জানিয়েছেন, গত বছর ২৬ জুন ওসি প্রদীপে বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মোস্তফার ওপর। ওসি প্রদীপের ভয়ে কক্সবাজার সমিতি পাড়ার বাড়ি বিক্রি করে আমরা ঢাকায় মিরপুরে চলে যাই। কিছুদিন পর ঢাকা থেকে তুলে নিয়ে আসে টেকনাফ থানায়। ওসি প্রদীপ নিজেই আমার স্বামী ফরিদুল মোস্তফাকে লোমহর্ষক নিপীড়ন করে। ওসি প্রদীপ ফরিদুল মোস্তফাকে উলঙ্গ করে ভিডিও করেছিলেন। এমনকি পতিতা ডেকে এনে তার সঙ্গে ছবি তুলে ভাইরাল করার হুমকি দিয়েছিলেন প্রদীপ।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার ওপর যে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল সেই কথা নিজেই স্বীকার করেছেন বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। টেকনাফের আরেক সাংবাদকর্মী রহমত উল্লাহর সঙ্গে ওসি প্রদীপের একটি কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অডিও ক্লিপটিতে শোনা যায়, ওসি প্রদীপ সাংবাদিক রহমত উল্লাহকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা লিখলে খবর আছে। এক পা আমার বাম পায়ের নিচে রেখে আরেক পা টেনে ছিড়ে ফেলমু। আমি জেল-ফাঁস কিছু মানি না। দেখেন না, ফরিদুল মোস্তফারে কি করেছি? উল্টোপাল্টা করলে ধরে এনে রান ফাইরা ফেলব।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ