আজ : শনিবার ║ ৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সহিংসতার নাটের গুরু বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র

নয়াদিল্লির সহিংসতার পেছনে বিজেপির স্থানীয় নেতা কপিল মিশ্র নাটের গুরু হিসেবে কাজ করেছেন বলে দেশটির বেশকিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। একটি ভিডিওতে বিজেপির এই নেতাকে দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে, সেই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের তিনদিনের মধ্যে হটিয়ে দিতে পুলিশকে আল্টিমেটাম দিতে দেখা যায়।

একই সঙ্গে বেঁধে দেয়া এই সময়ের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে না দেয়া হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকিও দেন তিনি। তার এই হুমকির পরদিন রোববার নয়াদিল্লির উত্তরপূর্বে ব্যাপক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিমদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। গত তিনদিনে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষের ও বিরোধীদের সংঘর্ষে অন্তত ২৩ জনের প্রাণহানি ও আরও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

এ ঘটনার পর দেশটির অনেকেই বিজেপির এই নেতাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। জবাবে বুধবার এক টুইট বার্তায় বিজেপির এই নেতা বলেন, যারা কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী বুরহান ওয়ানী এবং আফজাল গুরুকে সন্ত্রাসী মনে করেন না; তারাই আমাকে সন্ত্রাসী বলছেন। যারা ইয়াকুব মেমন, উমর খালিদ এবং শারজীল ইমামের মুক্তির জন্য আদালতে যান; তারাই আমাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। হিন্দিতে করা টুইটের শেষে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের স্লোগান ‘জয় শ্রী রাম’ জুড়ে দেন কপিল মিশ্র।

সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর জন্য দেশটিতে পরিচিত বিজেপির এই নেতা রোববার উত্তরপূর্ব দিল্লির মৌজপুর এলাকায় নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। ওই এলাকার পাশে জাফরাবাদে নাগরিকত্ব আইনে বিরুদ্ধে গত শনিবার রাত থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন শত শত মানুষ।

বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র জাফরাবাদ এবং মৌজপুর এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের যেকোনও মূল্যে হটিয়ে দিতে দিল্লি পুলিশকে আল্টিমেটাম দেন। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে বিক্ষোভকারীদের রাস্তায় ধরে ধরে পেটানো হবে বলেও হুমকি দেন তিনি। তার এই হুমকির কয়েক ঘণ্টা পর মৌজপুরে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থক ও বিপক্ষের লোকজনের মাঝে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

তার আগে এক ভিডিও বার্তায় কপিল মিশ্র বলেন, জাফরাবাদ এবং চাঁদবাগের রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে দিল্লি পুলিশকে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেয়া হলো। তিনদিন পর পুলিশের কোনও কথাই আমরা শুনবো না। এমন হুঙ্কারের সময় কপিল মিশ্রের পাশে দিল্লি পুলিশের কর্মকর্তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ভিডিওতে।

দেশটির বিরোধীদলীয় নেতারা কপিল মিশ্রের উসকানি এবং হুমকির তীব্র সমালোচনা করেন। দিল্লির প্রাণঘাতী সহিংসতার জন্য অনেকেই বিজেপির এই নেতাকে দাবি করেছেন। এমনকি বিজেপিদলীয় সংসদ সদস্য ও দেশটির সাবেক ক্রিকেট তারকা গৌতম গম্ভীরও কপিল মিশ্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের দিল্লির একটি হাসপাতালে দেখতে গিয়ে গৌতম গম্ভীর বলেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যারা এ কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা বিজেপি, কংগ্রেস অথবা আম আদমির নেতা হলেও তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এটা দিল্লির বিষয়, কোনও রাজনৈতিক দলের নয়।

এদিকে, দিল্লি বিজেপির প্রধান মনোজ তিওয়ারি রাজধানীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করার জন্য সব দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এমন কিছু করবেন না; যা মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরি কিংবা ভুল বার্তা দেয়।

দেশটির বামপন্থী নেতা ব্রিন্দা কারাত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে লেখা এক চিঠিতে দিল্লির সহিংসতার জন্য ক্রীড়ানক হিসেবে কপিল মিশ্র কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। চিঠিতে বিজেপির এই নেতাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ব্রিন্দা কারাত।

মঙ্গলবার একাধিক টুইটে কপিল মিশ্র বলেন, তাকে গালিগালাজ করা হচ্ছে এবং অনেকেই তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সমর্থন করে তিনি কোনও ধরনের ভুল করেননি বলে টুইটে দাবি করেন।

দেশটির সরকারি সংবাদসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে কপিল মিশ্র বলেন, আমাকে টেলিফোনে অনেকেই হত্যার হুমকি দিচ্ছে। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক-সহ অনেকেই আমাকে ফোন করে গালিগালাজ করছেন। কিন্তু আমি তাতে ভীত নই। কারণ আমি কোনও ধরনের ভুল করিনি।

চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। দেশটিতে মুসলিম বিদ্বেষী বার্তা ছড়ানোর জন্য অনেকের কাছে পরিচিত তিনি। দুই মাস আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর তার মুসলিমবিদ্বেষী বার্তা ছড়ানোর মাত্রা বেড়ে যায় তার। এমনকি সিএএবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আখ্যা দিয়ে গুলি করে হত্যার স্লোগানও দেন তিনি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ