ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনদিন ধরে সেখানে বিক্ষোভ চলছে। কয়েকদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর বুধবার দিল্লির সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এক বিবৃতিতে মোদি বলেন, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে আমি আমার দিল্লির ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সহিংসতা নিয়ে প্রথমবারের মতো এমন মন্তব্য করলেন মোদি। বিক্ষোভ-সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৮০ জন আহত হয়েছে। সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেছেন, তিনি রাজধানীর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।
এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে। শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো।
তিনি বলেন, আমাদের নৈতিকতার মূল বিষয় হচ্ছে শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা। আমি দিল্লিতে অবস্থানরত আমার বোন এবং ভাইদের কাছে অনুরোধ করব যে, তারা যেন সব সময় শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে চলেন। শান্তি এবং স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ফিরিয়ে আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে সহিংসপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। এদিকে, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) পক্ষে থাকা লোকজন এবং এর বিরোধীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনিও সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, সমগ্র দেশের মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। গত রোববার থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তারপর থেকে গত তিনদিনে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এলোপাতাড়ি ইট-পাথর নিক্ষেপের পাশাপাশি চলেছে গোলাগুলিও।
এদিকে, দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। তাই অবিলম্বে সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সবমিলিয়ে ৪৫ কোম্পানি আধাসেনা নামানো হয়।
দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যেই অমিত শাহর সঙ্গে একদফা বৈঠক করেছেন কেজরিওয়াল। তবে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, সহিংসতা রুখতে কেজরিওয়ালের প্রশাসনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি শান্তির আহ্বান জানানো ছাড়া সহিংসতা নিয়ে কোনও মন্তব্যও করতে দেখা যায়নি তাকে।
এদিকে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সহিংসতায় বিধ্বস্ত চাঁদবাগ এলাকা থেকে দেশটির গোয়েন্দা বাহিনীর এক কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকালের দিকে চাঁদবাগের একটি ড্রেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফেরার সময় চাঁদবাগে একদল উত্তেজিত জনতা অঙ্কিত শর্মার ওপর হামলা চালায়। চাঁদবাগ সেতুর ওপর তাকে পিটিয়ে হত্যার পর পাশের একটি ড্রেনে মরদেহ ফেলে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বুধবার সকালের দিকে মরদেহের খোঁজ পাওয়ার পর অঙ্কিতের বাবা রবিন্দর শর্মা বলেন, আম আদমি পার্টির সমর্থকরা তার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
অপরদিকে, গৌতমপুরী এবং মৌজপুরের আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দারা বাড়ির বাইরের দেওয়াল, প্রধান দরজা এমনকি বারান্দাতেও লাগিয়ে রাখছেন গেরুয়া পতাকা। তারা নিজেদের এভাবে হিন্দু বলে প্রমাণ করছেন যেন হামলার শিকার হতে না হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভজনপুরার এক বাসিন্দা বলেন, সহিংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য এই এলাকার প্রতিটি হিন্দু বাড়ি এবং দোকানের গায়ে গেরুয়া পতাকা লাগানো হয়েছে। যদিও এই এলাকা হিন্দু প্রধান, তবুও কয়েকজন মুসলিমেরও দোকান রয়েছে। সেগুলো সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।