আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১৪ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

পল্টন হত্যাকান্ডের খুনীদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হতে হবে- মুহাম্মদ জাফর সাদেক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ জাফর সাদেক বলেন, ২৮ অক্টোবর একটি শোকাবহ দিন, পাশবিকতার নির্লজ্জ উল্লাসের দিন ও দানবীয় নৃশংসতার দিন। ২৮ অক্টোবর ছিল চারদলীয় জোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন। এই ২৮ অক্টোবরে গণহত্যা কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর বাধাগ্রস্থ করা এবং গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ধারা নস্যাৎ করার জন্য তারা এই হত্যাকান্ড করেছিল। এই হত্যাকান্ড ছিল সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীর ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনার নির্দেশে সেইদিন লগি বৈঠার এবং বোমা দিয়ে সকাল ১০টা থেকে ৭টা পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৯ ঘন্টাব্যাপী হামলার নৃশংসতার দিন। সেদিন পল্টনসহ জামায়াত ও শিবিরের ১৪ জন সহ সারা দেশে ২১ জন ভাই শাহাদাত বরণ করেছেন। ঐদিন প্রশাসন সম্পুর্ণ নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পরিকল্পনা ছিল, জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা। এই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ১/১১ সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটাই ছিল ষড়যন্ত্রের মুল টার্গেট। এই পল্টন হত্যাকান্ডের খুনীদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হতে হবে।

আজ (বুধবার) বিকাল ৪:৩০ মিনিটে দেওয়ানবাজারস্থ এক কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যােগে ২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাকান্ড দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পল্টন গণহত্যার বিচার করতে হবে এবং এই গণহত্যার মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের বিচার ও শাস্তি দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখনো ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে এবং ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র করছে।

জাফর সাদেক বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে, নভেম্বরেই গণ ভোট দিতে হবে। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমীর পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশারের সঞ্চলনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ৯ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. এ কে এম ফজলুল হক, বায়তুশ শরফ কামিল মাদ্রাসা সাবেক অধ্যক্ষ ড. প্রফেসর সাইয়েদ আবু নোমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান, চট্টগ্রাম নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজুর রহমান, আমির হোছাইন, ডবলমুরিং থানা আমীর ফারুকে আজম প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ২৮ অক্টোবরের শহীদেরা হবে আমাদের প্রেরণার উৎস। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর বাংলাদেশে যে দূর্বৃত্তায়নের যাত্রা শুরু হয়েছিল জাতি তার কুফল ভোগ করছে দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে। অবশেষে হাজারো শাহাদাতের বিনিময়ে ৩৬ জুলাই বিপ্লবোত্তর একটি নতুন বাংলাদেশ আল্লাহ্ দান করেছেন। কিন্তু পতিত স্বৈরাচারের প্রতাত্মারা নামে-বেনামে দখলবাজি ও সন্ত্রাস জিয়ে রেখেছে। কুরআন তা’লিম থেকে মহান সমাবেশ পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক শক্তির হামলার শিকার হচ্ছে। স্বৈরাচারের দোসররা যে নামেই আসুক তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে এবং আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ২৮শে অক্টোবরের শহীদেরা হবে আমাদের প্রেরণার উৎস। শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়েই সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারের শপথ নিতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ ও ১৪ দলীয় দোসরদের লগি বৈঠার তান্ডবে সেদিনের নারকীয় ও পৈশাচিক হত্যাকান্ড সভ্য দুনিয়ায় এক কলঙ্কজনক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। এ নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার কবর রচিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ২৮শে অক্টোবরের পথ ধরেই বাংলাদেশে ১/১১ এর সরকার এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক পরিসংখানের নির্বাচন, ২০১৪ সালের ভোটারবিহিন নির্বাচন, ২০১৮ সালে নিশিরাতে সীলমারা এবং ২০২৪ সালের ডামি-আমি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ফ্যাসিবাদের জগদ্দল পাথর।

তিনি আরও বলেন, ২৮শে অক্টোবরের সেই নারকীয় হত্যাকান্ডের বিচারকার্য পুনরুজ্জীবিত করে নির্দেশ দাতা খুনি শেখ হাসিনাসহ হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, ডাক্তার ইকবাল, বাপ্পা দিত্য বসুর মতো চিহ্নিত খুনিদের আইনের আওতায় আনা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আর চূড়ান্ত বিচারের ফায়সালা আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছেই সোপর্দ করলাম যেদিন নিরপেক্ষতার সাথে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা রয়েছে।
মানবতার সত্যিকার মুক্তির পথ হলো ইসলাম। ২৮ শে অক্টোবরের লগি বৈঠার তান্ডবে শহীদদের রক্ত আজ লাল গোলাপ হয়ে দেশের সর্বত্র বিচরণ করছে। আমরা আশা করছি শহীদদের শাহাদাতের পথ ধরে এদেশে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে এবং শহীদদের সাথে জান্নাতের সিঁড়িতে আমাদের সাক্ষাৎ হবে ইনশাআল্লাহ।

আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুশ শরফ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. প্রফেসর সাইয়েদ আবু নোমান।

উক্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর কর্মপরিষদ সদস্য, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ