
দেশচিন্তা ডেস্ক: চট্টগ্রামে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে আজ ২৭ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ৪ টায় নগরীর সিনেমা প্যালেস চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ইনচার্জ আল কাদেরী জয়ের সভাপতিত্বে ও বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য আহমদ জসীমের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক নূরুচ্ছফা ভূইয়া, গণমুক্তি ইউনিয়নের জেলা সভাপতি রাজা মিয়া, বাসদ (মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য জাহেদুন্নবী কনক, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক শাহীন মঞ্জুরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ঘোষণা করেছে যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, পতেঙ্গার লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। এখানেই শেষ নয়, ধারণা করা হচ্ছে আরও দুটি টার্মিনাল পতেঙ্গার টার্মিনাল-১ এবং বে টার্মিনাল-২ এই দুই টার্মিনালও বিদেশিদেরকে ইজারা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। দেশের প্রবেশ মুখ হিসেবে বন্দর শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এটি একটি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশলগত বিষয়ও বটে। কারণ বন্দরের সাথেই নৌ ঘাটি, তেল সোধনাগার, বিমান বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থাপনা রয়েছে। এর ফলে জাতীয় সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার যে পটভূমি তৈরি হচ্ছে, তাতে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর ইজারা দিলে তারা পরিচালনা, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং প্রবেশাধিকারসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। দেশ যদি দুর্বল হয় আর বিদেশি কোম্পানি যদি সবল হয় তাহলে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিদেশিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে ভবিষ্যতে বন্দর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি। এই টার্মিনাল তৈরি হয়েছে দেশের অর্থে এবং দেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় এনসিটি দিয়ে।ফলে এই নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের হৃদপিন্ড। অথচ সেই হৃদপিন্ডকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে যেমন জিম্মি হয়ে পড়বে আমাদের দেশ, তেমনি জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ডিপি ওয়াল্ডের পিছনেই আছে মার্কিন সরকার কারণ এদের সাথে মার্কিন নৌ বাহিনীর চুক্তি রয়েছে। ঐ চুক্তির বলে মার্কিন নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে রি ফুয়েলিং ও মেরামতের জন্য নোঙ্গর করতে পারবে। যা খুবই ভয়ংকর। এটি ভূ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নীল নকশা। দেশের স্বার্থেই এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ”
সমাবেশ থেকে বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ৮ নভেম্বর ২০২৫ চট্টগ্রামে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের সমাবেশ ও গণর্যালি অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়।এবং উক্ত কর্মসূচি সফল করতে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।












