
দেশচিন্তা ডেস্ক: চট্টগ্রামে মুঘল আমলে নির্মিত অন্যতম স্থাপনা আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত সাড়ে তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোটি কোটি মানুষের সেজদায় সিক্ত এই মসজিদ চট্টগ্রামের অন্যতম আধ্যাত্মিক স্থান। নির্মাণশৈলীতে ঐতিহাসিক মসজিদটিকে স্মারক হিসেবে মাঝখানে রেখে চারপাশে আট হাজার মুসল্লির একই সঙ্গে নামাজ আদায়ের মতো চারতলা মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।
এর পাশে একটি ২০ তলা টাওয়ার এবং ৩৫ তলা উচ্চতার মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মসজিদকে এশিয়ার অন্যতম আধ্যাত্মিক ও পর্যটন স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে এই মসজিদ নির্মাণে সরকারের তরফ থেকে ১১ কোটি টাকা জোগান দেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকার সংস্থান স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অনুদানের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ নামে পরিচিত হলেও মসজিদটির দাপ্তরিক নাম চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ। মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটি চট্টগ্রামের অন্যতম পুরাকীর্তি।
এই মসজিদের সঙ্গে চট্টগ্রামে মুঘলদের বিজয় কাহিনিও জড়িত রয়েছে। ১৬৬৬ সালের ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁর ছেলে উমেদ খাঁ এই আন্দরকিল্লার অন্দরে বা ভেতরে প্রবেশ করলে এর নাম হয়ে যায় ‘আন্দরকিল্লা’।
চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ সালে এখানে নির্মাণ করেন ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ’।
প্রায় ১০০ বছর পর ১৭৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার এই মসজিদকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ১৮৮৫ সালে জমিদার হামিদুল্লাহ খাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং চট্টগ্রামের ওই সময়কার ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রচেষ্টায় মসজিদটি পুনরুদ্ধার হয়। ১৯৮৬ সালে সরকার মসজিদটি অধিগ্রহণ করে এবং এটি পরিচালনার দায়িত্ব ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দিয়ে দেয়।
সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, মসজিদটির নকশার সঙ্গে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের মিল রয়েছে।
দিল্লি জামে মসজিদের আদলে এই মসজিদটিও বড় বড় পাথর ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছিল। মূল মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট আর প্রস্থ প্রায় ২২ ফুট। এটি সমতল থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। এর প্রতিটি দেয়াল প্রায় আড়াই গজ পুরু। মূল মসজিদের পশ্চিমের দেয়ালটি পোড়ামাটির তৈরি। বাকি তিনটি দেয়াল পাথরের। ছাদে একটি বড় এবং দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটিতে তিনটি মেহরাব রয়েছে।
এই মসজিদের খতিব নিযুক্ত হন পবিত্র মদিনা শরিফের আওলাদে রাসুলগণ (সা.)। ফলে এটি ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতি রমজানে এ মসজিদে প্রতিদিন হাজারের বেশি রোজাদার একসঙ্গে ইফতার করেন। বিভিন্ন সময় এই মসজিদ সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও মসজিদের মুসল্লী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী, মসজিদের খতীব আওলাদে রাসূল সা. হজরত আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আব্দুস সালাম খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিডি মোহাম্মদ সারওয়ার আলমসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।