আজ : মঙ্গলবার ║ ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : মঙ্গলবার ║ ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২২শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রামুতে প্রবারণার ফানুসে ফিলিস্তিনের মুক্তির ডাক

দেশচিন্তা ডেস্ক: কক্সবাজারের রামুতে প্রবারণা পূর্ণিমার এবারের আয়োজনে উড়ল এক ব্যতিক্রমী বার্তা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শান্তির প্রতীক এই উৎসব এবার মানবতা ও বৈশ্বিক সহমর্মিতার এক নতুন মাত্রা ছুঁয়ে গেল।

২০১২ সালের ভয়াল সেই রাতের কথা রামুবাসী এখনো ভোলে নি, যখন সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় পুড়েছিল রামুর বহু বৌদ্ধ বিহার। ক্ষত ছিল শুধু স্থাপনায় নয়, বিশ্বাসেও। এক দশক পরে সেই রামু আজ শান্তি, সম্প্রীতি আর মানবতার বার্তা নিয়ে আকাশভরা ফানুসে উচ্চারণ করল বিশ্বব্যাপী নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক সাহসী বার্তা।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রামু সীমা বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য প্রবারণা উৎসব। আকাশে উড়তে থাকা রঙিন ফানুসগুলোর ভেতরে সবচেয়ে আলোচিত ছিল একটি- যাতে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’। এই বার্তা যেন উৎসবে আসা সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রবারণা পূর্ণিমা এক আত্মশুদ্ধি ও আত্মজিজ্ঞাসার দিন। রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, বর্ষাবাসের তিন মাস শেষে এই দিনে ভিক্ষুগণ আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নতুন করে ধর্মচর্চার অঙ্গীকার করেন। এটি মূলত সংযম ও পরিশুদ্ধতার উৎসব।

ফানুস এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, আলোয় ভরা ফানুস অন্ধকারকে সরিয়ে এনে আশার আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে। তাই এই রাতকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয় সকলে। নিজেদের জীবনের ও বিশ্বের কল্যাণ কামনায় আকাশে পাঠায় আলোর এই বার্তাবাহী ফানুস।

স্থানীয় সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া বলেন, প্রবারণা মানে শান্তির আহ্বান, সহমর্মিতার বার্তা ও মানবতার বন্দনা। তাই ফানুসে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ শুধু একটি বার্তাই নয়, এটি পৃথিবীর সব নিপীড়িত মানুষের প্রতি আমাদের সংহতির প্রকাশ।

তরুণ এক্টিভিস্ট ইনজামাম উল হক বলেন, প্রবারণার ফানুস আনন্দের বাহক হলেও, এবার এটি প্রতিবাদের কণ্ঠও হয়ে উঠেছে। এই ফানুসের আলো যেন ফিলিস্তিনসহ বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মানুষের জন্য আশার এক প্রতীক হয়।

স্থানীয় তরুণ অর্পণ বড়ুয়ার ভাষায়, ঘৃণা যেখানে মাথাচাড়া দেয়, সেখানেই আলো জ্বালানোই বৌদ্ধ দর্শনের মূল মন্ত্র। আজকের এই ফানুস সেই আলো হয়ে উঠেছে।

প্রবারণা উপলক্ষে কক্সবাজারের সব বৌদ্ধ বিহারে চলছে আলোকসজ্জা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রার্থনা এবং ফানুস উৎসব। অগগ্য মেধা ক্যায়াংসহ জেলার বিভিন্ন মন্দিরে এই উৎসব উদযাপন করতে দেখা গেছে বিপুল জনসমাগম।

এদিকে, উৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যার পর থেকে জেলা পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করেন।

জেলা পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, প্রবারণা পূর্ণিমা একটি শান্তির উৎসব। তাই উৎসব নির্বিঘ্ন রাখতে গোটা জেলায় নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সব কিছু সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে চলছে।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, সহানুভূতি এবং ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ বার্তাবাহী ফানুস— সব মিলিয়ে রামুর এবারের প্রবারণা উৎসব হয়ে উঠেছে সম্প্রীতি ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ