
দেশচিন্তা ডেস্ক: শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজনকে কেন্দ্র করে লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর ২টায় সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে বিজয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জনের এই আয়োজন।
জেলার সাতটি উপজেলার মণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা সৈকতে আনা হয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকেও প্রতিমা আনা হয়েছে। তবে চকরিয়া ও পেকুয়ার মণ্ডপগুলোর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে মাতামুহুরী নদীতে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী। দেবী দুর্গার বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ঢল নামে কক্সবাজারে। পূজার ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় টানা চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত হয়ে উঠেছে পর্যটকে ভরপুর। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দেশজুড়ে ছুটে এসেছেন হাজারো পর্যটক। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ফলে আগামী শনিবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত সৈকতজুড়ে পর্যটকদের উপস্থিতিতে থাকবে উৎসবের আমেজ।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার শহরের প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৯০ শতাংশের বেশি কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। বাড়তি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতি সুবর্ণা ও রিপন বলেন, “প্রতি বছর দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজারে আসি। কারণ এখানে দেশের সবচেয়ে বড় বিসর্জন উৎসব হয়। লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। আনন্দ আর বেদনার মিশ্র অনুভূতি হয়। বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যা হলেও আনন্দে তার প্রভাব পড়েনি।”
ইনানী সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক সোমা চৌধুরী বলেন, “শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নয়, সব ধর্মের মানুষই এই ছুটি উপভোগ করছে। আমরাও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পরিবারসহ কক্সবাজারে এসেছি। শনিবার রাতে ফিরে যাবো।”
বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী পর্যটক পারভেজ আলম বলেন, “বৃষ্টির দিনে কক্সবাজার ঘোরার আলাদা একটা আনন্দ আছে। মেরিন ড্রাইভ হয়ে ইনানী বা পাটুয়ারটেকের কোনো রিসোর্টে উঠলে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া যায়।”
হোটেল-মোটেল মালিকদের সংগঠন ‘কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, “এবারের পূজার ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরাও বেশ খুশি।”
হোটেল দি কক্স টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম পূজার সরকারি ছুটিতে হোটেল বুকিং ভালো হবে। সেটাই হয়েছে। পর্যটকদের আগমনে এবার ভালো ব্যবসা হচ্ছে।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু জানান, “বিকেল ৫টায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এই বৃহৎ আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। আশা করি, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আজকের অনুষ্ঠান শেষ হবে।”
সকাল থেকেই সৈকত এলাকায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি টহল দেখা গেছে। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে জেলা প্রশাসনের সমন্বিত কন্ট্রোল রুম।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আপেল মাহমুদ বলেন, “বিপুল সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতিতে যেন কোনো অপরাধ সংঘটিত না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। চুরি, ছিনতাই রোধে অভিযানও চলমান। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও জেলা পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করছে। সব মিলিয়ে নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত।”
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে।
সি সেইফ লাইফ গার্ডের মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, “বৈরি আবহাওয়ায় সৈকতে গোসল ঝুঁকিপূর্ণ। সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় গুপ্তখাল রয়েছে, যা মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে। পর্যটকদের সচেতনভাবে চলাফেরা করতে হবে। আমাদের লাইফগার্ড সদস্যরা সবসময় প্রস্তুত আছেন সহায়তার জন্য।”
দুর্গাপূজা উপলক্ষে ছুটির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ৪ অক্টোবর পর্যন্ত “ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস” নামে একটি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে।