
দেশচিন্তা ডেস্ক: যেকোনো সংকটে সাড়াদানের জন্য তরুণদের নিয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ’ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক শক্তি তৈরি করা সরকারের লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
তিনি বলেছেন, “তরুণ প্রজন্ম সর্বদাই উৎসাহ ব্যঞ্জক। তরুণেরা ইতোমধ্যেই সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের প্রদান করা হলে, সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবীরা অসাধারণ কাজ করতে সক্ষম।
“তরুণ-সম্পৃক্ত এই মডেলকে আরও বিস্তৃত করা এবং সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। আমাদের লক্ষ্য একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক শক্তি তৈরি করা, যা যেকোনো সংকটে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকবে।”
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে পূর্বাভাসভিত্তিক আগাম সাড়াদান কার্যক্রমের তৃতীয় ন্যাশনাল ডায়ালগ প্লাটফর্মের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাসভিত্তিক আগাম সাড়াদান কার্যক্রম টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে এবং অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সহযোগিতায় দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে পূর্বাভাসভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তয়নে সক্ষমতা বাড়ানো এই সংলাপের লক্ষ্য।
ফারুক ই আজম বলেন, “নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার এক ও অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। আজ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে এবং আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও এখানে উপস্থিত আছেন- যা অত্যন্ত উৎসাহ ও আশাব্যঞ্জক।
“আপনাদের উপস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দুর্যোগ সহিঞ্চুতা একক প্রচেষ্টা নয় বরং সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে ওঠে।”
বাংলাদেশ সবসময়ই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “স্মরণ করছি ১৩ নভেম্বর ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের কথা, যা পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। ভোলা ঘূর্ণিঝড় প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল এবং আমাদের জাতির স্মৃতিতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল। এই ভোলা-সাইক্লোন এর মাধ্যমে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের জনগন প্রবল বৈষম্য অনুভব করেছিল।
“বাংলাদেশকে অদ্যবধি বারবার মোকাবিলা করতে হয়েছে-বন্যা ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়- যা জানমালের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং মানুষের জীবিকা ধ্বংস করেছে এবং সর্বোপরি আমাদের উন্নয়ন মন্থর করেছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে আরও কঠিন করেছে।”
বর্তমান জলবায়ু বাস্তবতায় বিভিন্ন দুর্যোগ ঝুঁকি বেড়েই চলেছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস, বজ্রপাত, খরা, তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ-আরও প্রবল এবং ঘনঘন ঘটছে। এগুলো শুধু আমাদের অর্থনীতিকে নয়, মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাপনকেও হুমকির মুখে ফেলছে।
“হ্যাঁ, জলবায়ু সহায়ক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা হয়ত অগ্রগতি সাধনও করেছি। উন্নত প্রস্তুতির কারণে জীবনহানির সংখ্যা আগের তুলনায় এখন অনেক কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো- অর্থনৈতিক ক্ষতি, জীবিকা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এখনও ব্যপকভাবে আমাদেরকে পর্যদুস্ত করে চলেছে।”
২০১৫ সাল থেকে দুর্যোগ মোকাবেলার চেয়ে দুর্যোগ প্রশমন অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জানিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, “অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কেবল পূর্বাভাস নয়, বরং পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেওয়া। সংকট আসার আগে কাজ করা, পরে নয়। এই মানসিকতাই আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভাবনায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
“বাংলাদেশ একটি অনন্য দেশ। আমাদের সমাধানগুলো হতে হবে বাস্তবভিত্তিক, মানুষকেন্দ্রিক, কমিউনিটি-ভিত্তিক, স্থানীয় নেতৃত্বাধীন। একমাত্র এভাবেই আমরা ক্ষতি কমাতে, জীবন বাঁচাতে, আর দুর্বল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষা করতে পারব।”
তিনি বলেন, “আগামী দুই দিন এই সংলাপ হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম-যেখানে আমরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করব, নতুন ধারণা খুঁজব, আর সামনে এগোনোর পথ নির্ধারণ করব। চলতি বছরের নির্ধারিত থিম হলো, বহুমুখী ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমন্বিত ও স্থানীয় নেতৃত্বাধীন অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন নিশ্চিত করা।
“অর্থাৎ, প্রতিটি কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি আমরা স্থায়ী পরিবর্তন চাই- তাহলে নীতিমালা, পদ্ধতি এবং কমিউনিটি-প্রত্যেককে সমন্বিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং পূর্বাভাসভিত্তিক আগাম সাড়াদান কার্যক্রম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কে এম আব্দুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মাদ আকমাল শরীফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধি জেস উড, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজোয়ানুর রহমন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. আজিজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ও সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।