আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গত এক বছরে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ : আইজি প্রিজন

দেশচিন্তা ডেস্ক: কারাগারগুলোকে নগদ টাকা মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেছেন, গত এক বছরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এখনো অল্প অল্প ধরা পড়ছে। তবে আগের থেকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কারা সদরদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।

‎কারাগারে মাদক বিস্তার রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন বলেন, আপনারা জানেন কারাগারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা থাকে। আমরা কঠোর হয়েছি, ফলে আমরা অনেকটা রিকভার করেছি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তত এক হাজারের বেশি অভিযান চালানো হয়েছে। তল্লাশিতে বিপুলসংখ্যক ছোট সাইজের মোবাইল উদ্ধার করেছি। এখন অনেকটা কমেছে, তবে বন্ধ হয়েছে বলা যাবে না। আমরা মাদকের বিষয় অনেক কঠোর। এমন কি পেটের মধ্যে করে ইয়াবা নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে বেশি ধরা পড়েছে। আর মাদক মামলায় যারা গ্রেফতার তাদের কারাগারে আনার পর বিশেষ সেলে রাখা হয়। যাতে করে তিনি মাদক ছড়িয়ে দিতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, এমনও বন্দী এসেছে যার পেটে ১২০০ ইয়াবা পেয়েছি। আমরা এখনও শতভাগ সফল না, তবে আমরা উন্নতি করেছি। এমন কি মাদকের সঙ্গে জড়িত কারারক্ষীদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোবাইলের বিষয় আমরা অনেক কঠোর। এমন কি মোবাইলের আলামত পাওয়ায় ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের ডিভিশন বাতিল করা হয়েছে।

পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ আগস্টে বিভিন্ন কারাগার থেকে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বন্দী পালিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে অনেক গ্রেফতার ও ফিরে এসেছেন। এখনও ৭০০ এর বেশি বন্দী পলাতক রয়েছে। এরমধ্যে জঙ্গি ৯ জন এবং মৃতদন্ড, যাবজ্জীবন দণ্ড প্রাপ্ত বন্দী ৬০ জন।

তিনি আরও বলেন, এখনও ২৯ টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আরও কিছু গোলা বারুদ বাকি আছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে অস্ত্র ফেরত দিলে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

‎কাশিমপুর থেকে আদালতে নারী বন্দীদের আনা নেওয়ার সময় গরমসহ নানা কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সমস্যার সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন বলেন, কেরানীগঞ্জে আরও একটি কারাগার প্রতিস্থাপন করার কাজ চলমান রয়েছে। এরমাধ্যমে নারী বন্দীদের এই সমস্যা সমাধান করতে পারবো। পাশাপাশি আমাদের বিশেষ কারাগারেও একটি সেলকে নারী বন্দীদের জন্য খোলা হবে। যাতে করে যে সব নারী বন্দীদের যাতায়াতে সমস্যা। তাদের জন্য সহজ হবে।

‎বন্দীদের জন্য ল্যান্ডফোনে যোগাযোগের উদ্যোগ এখনো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে একবার ৫ মিনিট করে বন্দীদের ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সমস্যা হলো ম্যানুয়াল সিস্টেমের জন্য। কারণ স্বজন ও আইনজীবীর বাইরে ফোন দেওয়ার কথা না। কিন্তু আসলে এটার অপব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য আমরা একটা অটোমেশন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জ কারাগারে চালুর ব্যবস্থা হচ্ছে। ১৩টি কারাগারের জন্য কাজ চলছে। এর ফলে কারারক্ষীদের ডিউটি চাপ কমবে ও যারা বন্দী আছে তারাও অপব্যবহার করতে পারবে না।

‎পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স করা হয়েছে যদি ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য বা অন্য কোন ভাবে নিরাপত্তা বিঘ্নিত ঘটনার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের মেসেজ দিবে। তখন আমরা ব্যবস্থা নেবো।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মহাপরির্দশক বলেন, আমরা কারাগারগুলোতে ধীরে ধীরে কম্প্রিহেন্সিভ জ্যামিং সিস্টেম চালুর চেষ্টা করছি। প্রথমে স্পেশাল জেল ও কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে এটি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া পাইপলাইনে আছে। একটি খুব শীঘ্রই লেগে যাবে, আরেকটি হয়তো দুই-তিন মাস লেগে যাবে। ধাপে ধাপে সব গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে এটি লাগানো হবে।

কারাগারে কতজন রাজবন্দি আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে রাজনৈতিক বা ভিআইপি বন্দি বলে কিছু নেই। এখানে রাজনৈতিক কোনো মামলা নেই, এখানে হচ্ছে বিভিন্ন অভিযোগ। কেউ মারামারি, কেউ গণহত্যা, কেউ হত্যা মামলার আসামি। আমার জায়গা থেকে রাজনৈতিক আইডেন্টিফিকেশন দিয়ে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মামলার গুরুত্ব বা ধারা অনুসারে আলাদা করছি। কারাগারে ভিআইপি বন্দি বলে কিছু নেই। এটা হচ্ছে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি। বর্তমানে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি আছেন ১৬৩ জন। এছাড়া ডিভিশন আবেদন করে পাননি এমন বন্দি আছেন ২৮ জন।

কারাগারগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কারা অধিদপ্তরে লিস্টেট ডাক্তার আছে ১৪১ জন। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ২ জন। এছাড়া সিভিল সার্জন থেকে ১০৩ জন নিয়োগকৃত আছেন, যারা প্রয়োজনে আসেন। তবে এটা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আমরা এটা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। আমাদের অ্যাম্বুরেন্সেরও সল্পতা আছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ