
সাতকানিয়া সংবাদদাতা :
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানীহাটে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে পরিচালিত অভিযানে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল এবং যত্রতত্র পার্কিংয়ের অপরাধে সাতটি মামলায় ৫ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য এই ধরনের অভিযান ‘অব্যাহত’ থাকবে।
কিন্তু অভিযান থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সড়কে ফিরেছে আগের মতোই বিশৃঙ্খলা বরং আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অনিয়মকারীরা। অভিযানের সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে চেকিং শুরু হয়। পুলিশের সহায়তায় মোটরসাইকেল থামিয়ে চালকের হেলমেট আছে কি না, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না তা দেখা হয়। বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা, ফিটনেস সার্টিফিকেট যাচাই সবই চলছিল।
স্থানীয়দের চোখে এটি ছিল এক ধরনের ‘দেখিয়ে দেওয়া’ অভিযান। দোকানপাটের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষজন দৃশ্য দেখছিল, কেউ কেউ ভিডিও করছিল, আবার কেউ কেউ বলছিল “এবার হয়তো সড়ক একটু শৃঙ্খল হবে।”তবে অভিযান বন্ধ হওয়ার পর থেকে মহাসড়কে অনিয়মের যেন উৎসব শুরু হয়েছে।
হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল রেস খেলছে তরুণরা, করছে দল বেঁধে প্রতিযোগিতা, যেন আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ফিটনেসবিহীন বাস সড়কের মাঝখানে হঠাৎ থেমে যায়, যাত্রী তোলে অতিরিক্ত। যত্রতত্র পার্কিং করে রাখে বাস, ট্রাক কেরানীহাট মোড়ে। পিকআপ দাঁড় করিয়ে রাখে ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। লাইসেন্সবিহীন চালকেরা কাগজপত্র ছাড়াই অবাধে গাড়ি চালাচ্ছে অনেকেই।
এক রিকশাচালক জানান, অভিযান চলাকালীন সময় একটু সুবিধা হয়েছিল, গাড়ি ঠিকঠাক চলাচল করছিল। কিন্তু এখন আবার আগের মতোই। কেরানীহাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, এগুলো আসলে কাগজে দেখানোর অভিযান। ছবিতে ভালো দেখায়, কিন্তু বাস্তবে কিছু বদলায় না।
আইন অনুযায়ী হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালালে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা কারাদণ্ড। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। কিন্তু কেরানীহাটে এই আইন মানাতে স্থায়ী কোনো নজরদারি নেই।
কেরানীহাটে এটা প্রথমবার নয়। আগেও বহুবার দেখা গেছে— দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন কর্মকর্তারা অভিযান চালান। প্রথম প্রথম সংবাদমাধ্যমে প্রশাসনের সাফল্যের খবর প্রকাশিত হয়। পরে অভিযান বন্ধ হয়। অনিয়মকারীরা দ্বিগুণ উৎসাহে ফিরে আসে। গত কয়েক বছরে এমন কয়েকটি অভিযান হয়েছিল, কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় থেমে যায়। ফলস্বরূপ, বছরের বাকি সময় সড়কে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়।