আজ : শনিবার ║ ২৮শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ২৮শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ৩রা মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সবুজ বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথি: বনায়নের চার দশকের অগ্রযাত্রা

প্রাণপ্রকৃতি ডেক্স, দেশচিন্তা:
বাংলাদেশ আজ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে জর্জরিত। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, তাপপ্রবাহ এবং মরুকরণের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ‘বনায়ন’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গত ৪৫ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করা ‘বনায়ন’ পরিবেশের সুরক্ষা ও বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ১৩ কোটিরও অধিক ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, গড়ে তোলা হয়েছে ১১৯টি ঔষধি গাছের বাগান। ঢাকা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, রাজশাহী, লালমনিরহাট, নাটোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, যশোর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটি সহ দেশের মোট ২৪টি জেলায় ‘বনায়ন’-এর কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই উদ্যোগ বার্ষিক ২৫,০০০ এরও অধিক সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছেছে, যা দেশের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে এক বিশাল অবদান রাখছে।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) নেতৃত্বে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপিত হয়, যা সরকার ও অন্যান্য সকল অংশীদারদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে অনুপ্রাণিত ও সচেতন করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘বনায়ন’ দেশজুড়ে লক্ষাধিক চারা বিতরণ করবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এলাকাতেও বনায়নের কার্যক্রম প্রশংসনীয়। প্রায় ১১ লাখ উদ্বাস্তু মানুষের আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় দেড় হাজার হেক্টর বনভূমি উজাড় হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে পাহাড়। এই বিশাল ক্ষতির মুখে, সরকার, রিফিউজি, রিলিফ এবং রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশন (আরআরআরসি), ডব্লিউএফপি, এফএও, ব্র্যাক, কারিতাস এবং ‘বনায়ন’ প্রকল্প একসাথে কাজ করছে অত্র এলাকায় সবুজের ছোয়া ফিরিয়ে আনতে। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বনায়ন প্রকল্পের আওতায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩৩.৭ হেক্টর ব্লক এলাকা ও ১৮.৭ কিলোমিটার রাস্তার পাশ জুড়ে ৩ লাখেরও বেশি চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।

জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ‘বনায়ন’ কর্মসূচি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার, প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় পুরস্কার, এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩, ‘এন্টারপ্রাইজ এশিয়া’ থেকে গ্রিন লিডারশিপের জন্য ‘এশিয়া রেসপনসিবল অন্ট্রাপ্রনারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ এবং এসডিজি ইনক্লুশন ক্যাটাগরিতে ‘বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড ২০২১’।

একটি সম্ভাবনাময় আগামী নিশ্চিত করতে ‘বনায়ন’ কর্মসূচির নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকল অংশীদারের সাথে একযোগে কাজ করার এই অঙ্গীকার বাংলাদেশকে একটি সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরেও বনায়ন ৩০ লাখেরও অধিক চারা বিতরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ