
দেশচিন্তা ডেস্ক : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। দেশের বিশ কোটি মানুষের প্রাণ। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চক্রান্ত সহ্য করা হবে না। বন্দরে কোনো দুর্নীতি ও লুটপাট চলতে দেওয়া হবে না। বন্দরকে কেন্দ্র করে ইসলামী শ্রমিক সংঘের ষোলো দফা দাবি মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি আমরা আরও দাবি জানাই, শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়ার পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। শ্রমিকবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত বন্দর গড়ে তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী উপর্যুক্ত কথা বলেন।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বন্দর থানা সভাপতি আবু তালেব চৌধুরী ও শ্রমিক সংঘের সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং বন্দর থানা সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম আদনান ও শ্রমিক সংঘের সহ-সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় উক্ত কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান বলেন, বিগত ষোলো বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সারা দেশের মানুষ ছিল অধিকার বঞ্চিত। একইভাবে শ্রমিক অঙ্গন ও শ্রম সেক্টরগুলোও ফ্যাসিবাদের দোসর সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের দৌরাত্মে জর্জরিত ছিল। শ্রমিক লীগের এসকল সন্ত্রাসী শ্রমিকদের সব সময় ভীতিকর পরিবেশের মধ্যে রাখত। শ্রমিকজনতা শ্রমিক ময়দানে সেসব সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের আর দেখতে চায় না। নতুন বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্বে আমরা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে ভূমিকা পালন করতে চাই।
কর্মী সম্মেলনে ১৬ দফা দাবী উত্তাপন করা হয়।
অবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের বহুল আকাঙ্খিত সিবিএ নির্বাচন দিতে হবে। চবক এর বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শ্রম বৈষম্য দূরীকরণে চবক-এ ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক শ্রমনীতির বাস্তবায়ন চাই। ৯১ এর সংশোধিত প্রবিধানমালা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক বন্দর মানে স্বতন্ত্র পে-স্কেল পূর্নবহাল চাই। (স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালীন CPT (বর্তমানে CPA), NSCP(বর্তমানে BSC), এবং PIA (বর্তমানে BBA) এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল থেকে উচ্চতর বেতন স্কেল ভোগ করতেন, স্বাধীনতা পরবর্তী BSC এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে উচ্চতর বেতন স্কেল বিদ্যমান থাকলেও বন্দর কর্মচারীদেরকে জাতীয় বেতন স্কেলের সাথে একীভূত করা হয়েছে)।
চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থে নির্মিত CCT, NCT টার্মিনাল ও যন্ত্রপাতি সহ বন্দরের যে কোন স্থাপনা বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার নিমিত্তে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অবিলম্বে শূন্যপদে নিয়োগ চালু করতে হবে (দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার রয়েছে, বন্দরে বর্তমানে ৪০৫৪ টি পদ খালি থাকায় প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কাজ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। লোক নিয়োগ না করা বন্দরকে বেসরকারীকরণের ষড়যন্ত্রেরই অংশ)। পদোন্নতি- ফিডার সার্ভিস শেষ হলেই শূন্যপদে পদোন্নতি দিতে হবে- (নিত্য-নতুন প্রশাসনিক জটিলতা
তৈরী করে পদোন্নতি থেকে কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া হবে না)।
‘দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন চাই’ -২/৩ বছর পর পর বা যৌক্তিক সময়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন বদলী
চালু করতে হবে। সদস্য পদে বন্দরের দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। ব্লক পোষ্ট এর পদোন্নতি ব্যবস্থাকরণ- চাকুরী জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি একই পদে চাকুরী করা অমানবিক তাই ব্লক পোষ্টে কর্মরত কর্মচারীদেরকে যৌক্তিকভাবে সম বেতনে সম স্টেটাসের পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
অবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরে সরকার ঘোষিত গৃহনির্মাণ ঋণ প্রকল্প চালু করতে হবে। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাহা চালু হয়েছে।
প্রতি বৎসর বন্দর দিবসে বন্দরের লভ্যাংশের ১০% বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সমভাবে বণ্টন চাই (দেশের বিভিন্ন সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যাহা চালু আছে) পোর্ট ডিউটি ভাতা জাতীয় বেতন স্কেলের সর্বনিম্ন খাপের (২০ তম গ্রেড) সমপরিমাণ প্রদান করতে হবে।
৯০ দিনের ইনসেনটিভ বোনাস আদায়ের কার্যকরী ব্যবস্থা অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে। কীটস এলাউন্স ২৫০০০/- টাকা নির্ধারন এবং প্রতি বছর ৫% হারে বৃদ্ধি করতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের অবিলম্বে ঝুঁকিভাতা প্রদান করতে হবে।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের বন্দর থানার উপদেষ্টা মাহমুদুল আলম, শ্রমিক সংঘের সাবেক সভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইয়াছিন, ৩৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শফিউল আলম, সংঘের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মল্লিক, আব্দুর রহিম পাঠান, সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের অফ ডক বিষয়ক সম্পাদক ফোরকান আজাদ, বন্দর স্টাফ ইউনিয়ন সাবেক সভাপতি আবুল বশর, ডক ইসলামী শ্রমিক সংঘের সভাপতি ওমর ফারুক, উইন্সম্যান সভাপতি ওমর ফারুক, প্রাইমমুভার সভাপতি মোঃ মাসুদ, ফেডারেশনের ৩৬ নং ওয়ার্ড সভাপতি সানাউল্লাহ আজমী, ৩৭ নং ওয়ার্ড সভাপতি রফিকুল ইসলাম, ৩৮ নং ওয়ার্ড সভাপতি ইব্রাহিম প্রমুখ।















