
এস এম জাকারিয়া, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : পুরো জমি যতটুকু চোখ যায় শুধুই লালে লাল। গাছে গাছে ঝুলছে পাকা টমেটো। গাছগুলো সব নুয়ে পড়েছে। কিন্তু এতসুন্দর টমেটো তুলতে কোনই আগ্রহ নেই ক্ষেতের কৃষকদের। ফলে ক্ষেতেই দেদারসে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টমেটো। শুধু তাই নয়, অন্য সবজিরও প্রয়োজনীয় দাম না পাওয়ায় ক্ষেতের মধ্যেই পঁচছে সেগুলো। এমন চিত্র দেখা গেলো চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয়রা বলছেন, অতি মাত্রায় গরম এ হঠাৎ দরপতনের কারণে জমিতেই পঁচছে টমেটো। এ ছাড়া দরপতনের কারণেও টমেটো তুলতে আগ্রহ হারিয়েছেন তারা। এক মণ টমেটো উৎপাদন ও বাজারজাত করতে যে টাকা খরচ হচ্ছে বাজারজাত করণে তা পাওয়া যাচ্ছে না, এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সীতাকুন্ড বাসী কৃষকদের দাবি, সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যে ১২ মাস বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। উৎপাদিত সবজি সরবরাহ হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। দেশের সবজি চাহিদা মেটাতে অবদান রাখছেন সীতাকুণ্ডের কৃষকেরা। কৃষিখাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা বা সংরক্ষণাগার থাকলে এ ক্ষতি এড়ানো যেত।
এই দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ শুধু সবজি ক্ষেত। যেখানে টমেটো, বরবটি, করলা, লাউ, ঢ্যাঁড়শ ইত্যাদি। জমিতে ফলন বেশ ভালো হলেও খরচ অনুযায়ী দাম না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন চাষিরা, এমতাবস্থায় তারা উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। প্রতি বছর মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সবজি চাষ হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন হয় টমেটোর।
সীতাকুন্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়ন নিবাসী কৃষক আবছার বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫০ শতক টমেটো চাষ করেছি। ধার-দেনা করে চাষ করতে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু বিক্রি করে যে টাকা পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে বাজারজাত করতে। হিসাবানুযায়ী বাজারজাত করা পর্যন্ত যেখানে খরচ হয়েছে প্রতি কেজি টমেটোতে প্রায় ১০-১২ টাকা সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকা করে।’এমন হলে ভবিষ্যতে চাষাবাদই বন্ধ করে দিতে হবে বাধ্য হয়ে।
মীরসরাইয়ের কৃষক আকীব দুঃখ করে বলেন, ‘প্রথমদিকে কিছুটা দাম পেলেও মাঝখানে টমেটোর দাম পড়ে গেছে। আমরা কৃষকেরা লসের মুখে পড়ায় এখন আর ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছি না। টমেটো তুলতে যে খরচ হয়, বিক্রি করতে হয় তার অর্ধেক দামে। তাহলে কেনো তুলবো? ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিব উল্ল্যাহ বলেন, ‘তীব্র গরমে টমেটো দ্রুত পেকে যায়। যদি টমেটো প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা থাকত বা সংরক্ষণের জন্য হিমাগার থাকত, তাহলে টমেটো নষ্ট হতো না। একই অবস্থা অন্যান্য সবজির দামেও। টমেটোসহ চাষকৃত সকল সবজির দাম চাহিদানুযায়ী না পাওয়ায় কৃষকেরা হতাশায় ভুগছেন।
মীরসরাইয়ের কৃষি সুপারভাইজার কাজী নূরুল আলম বলেন – ‘ বর্তমানে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষক সবজি চাষে ঝুঁকছেন। কিন্তু এবার হঠাৎ করে দাম পড়ে যাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ না ওঠায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এজন্য ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে বহু কষ্ট ও অর্থব্যয়ে চাষ করা টমেটো সহ বিভিন্ন সবজি। এমতাবস্থায় দ্রুত হিমাগারের ব্যবস্থা করা না গেলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের আর কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।