
দেশচিন্তা ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে ‘অনগ্রসর, প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনে প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুর আড়াইটায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনার অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউজিসির সাবেক সদস্য, বাহরাইনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, নৃবিজ্ঞান হলো মানব বিজ্ঞান। এটা মূলত মানুষের বিজ্ঞান সম্মত পঠন-পাঠন। এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো মানুষের সংস্কৃতিকে অনুধাবন করা, সংস্কৃতির বিবরণ তৈরি করা এবং এর মাধ্যমে মানুষের জীবন ও সমাজের একটি সঠিক ও সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা। নৃবিজ্ঞানীরা শুধু মানব সমাজ ও সংস্কৃতির বর্ণনাই প্রদান করেন না, তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যার স্বরূপ ও কারণ উদঘাটন করেন এবং সমস্যাসমূহের সমাধানের জন্য উপযুক্ত ও উপযোগী পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ প্রদান করেন। তারা বর্তমানে মানুষের জীবন প্রণালীর সঠিক বিষয়াবলী অধ্যয়নের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, নৃতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে আমরা মানবজাতির সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়াবলীর পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত বর্ণনা পেতে পারি। পাশাপাশি মানবজাতির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তথা সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনক্ষর, অনগ্রসর এবং অগ্রসর সমাজ গবেষণায় প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে নৃবিজ্ঞান শুধুমাত্র আদিম সমাজ ও আদিম মানুষেরই পঠন-পাঠন; কিংবা এটি শুধু অনক্ষর সমাজ, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। বিগত কয়েক দশকে নৃবিজ্ঞানীদের অনেকেই নৃবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রকে কেবল অনক্ষর ও অনগ্রসর সমাজের মধ্যে সীমিত না রেখে অনগ্রসর ও অগ্রসর উভয় সমাজের সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠী নিয়ে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ও চবি ছাত্র-ছাত্রী নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন, প্রফেসর ড. খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশরেকা অদিতি হক, সাবিহা রাইয়ান শশী, সহকারী অধ্যাপক ফারিয়া মাহ্জেবীন, সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুল হক, ড. তনিমা সুলতানা, মোক্তার আহমেদ চৌধুরী, প্রভাষক দাইয়ান বেলাল ও প্রভাষক সাদেকা তামান্না। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চবির অতীশ দীপঙ্কর হলের প্রভোস্ট ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপক প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীকে নৃবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। চবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর গবেষণা প্রতিষ্ঠান এপ্লাইড এন্থ্রোপলজি ইন্সটিটিউট এর পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। সেমিনারে নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।