
দেশচিন্তা ডেস্ক: প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন বিভাগের উদ্যোগে সম্প্রতি ‘ফিল্ম এন্ড স্যোশিওলজি’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেমিনার উদ্বোধন করেন বিভাগের কো-অর্ডিনেটর সহকারী অধ্যাপক ড. সাদিকা সুলতানা চৌধুরী। সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগাত মোরিওঁ, যিনি ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস উন পন্তেয়োঁ-সোর্বোন-এ সমাজ-নৃতত্ত্ব (স্যোশিও-এন্ত্রোপলজি) বিষয়ে অধ্যয়নরত। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের প্রভাষক অর্পা পাল এবং আবদুল্লাহ আল মোজাহিদ।
আগাত মোরিওঁ তাঁর উপস্থাপনায় ‘ফিল্মিক স্যোশিওলজি’ ধারণার নানান দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি সমাজবিজ্ঞান গবেষণার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। নৃবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্বে ফটোগ্রাফি ও ভিডিওর ভূমিকা, সামাজিক ডকুমেন্টারি, সামাজিক ফিকশন ও অ্যাক্টিভিস্ট সিনেমা সবই সমাজ ও সংস্কৃতিকে অনুধাবনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘ফিল্মিক স্যোশিওলজি’ এমন একটি প্র্যাকটিস, যা সমাজবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজকে একত্রিত করে, গবেষণা ও সামাজিক বার্তা উভয় দিকই শক্তিশালীভাবে ফুটিয়ে তোলে।
আলোচনার শেষাংশে আগাত মোরিওঁ মত দেন যে, সমাজবিজ্ঞানের প্রচলিত লিখিত আকারের তুলনায় চলচ্চিত্র সমাজে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে সক্ষম। সেমিনারের অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা তাঁর উপস্থাপনা শেষে তাঁকে নানা প্রশ্ন করেন এবং বিষয়টি নিয়ে একটি প্রাণবন্ত ও জ্ঞানসমৃদ্ধ আলোচনা হয়।
সমাপনী বক্তব্যে সমাজতত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন বিভাগের প্রভাষক অর্পা পাল সিনেমার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, স্যোশিওলজি শুধু একাডেমিক পাঠ নয়; এটি বাস্তব জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত একটি প্র্যাকটিক্যাল বিষয়। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের উদাহরণ টেনে দেখান, কীভাবে সত্যজিৎ রায়, ঋতুপর্ণ ঘোষ, ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেন তাঁদের চলচ্চিত্রে সামাজিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ, অন্যায় ও অবিচারের বিষয়গুলো গভীরভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং সৃজনশীলতার সাথে সাহসী প্রতিবাদের ভাষা সৃষ্টি করেছেন। ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রের সংলাপ ‘ভাবো, ভাবা প্র্যাক্টিস করো’ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ফিল্ম এবং স্যোশিওলজি সমাজে বিদ্যমান সংকট নিয়ে আমাদের ভাবতে শেখায় এবং পরিবর্তনের প্রেরণা জোগায়।
পরিশেষে তিনি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে এমন একাডেমিক ও সৃজনশীল আলোচনায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার জন্য উৎসাহিত করেন।