
নিজস্ব প্রতিবেদক:
টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড় এবং দেয়াল ধসে ও গাছ উপড়ে পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছছে। এদের মধ্যে বিবি জোহরাসহ তিনজন একই পরিবারের সদস্য।
সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থেমে নেই, কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাতের পর গতকাল ১৩ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রাত যতই বাড়ে ততই টানা বর্ষণ বাড়তে থাকে।
শনিবার রাত প্রায় ২ টার সময় নগরীর আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ কলোনির রেলওয়ের মালিকানাধীন একটি পাহাড়ের বসতির উপর মাটির বড় খণ্ড ধসে পড়ে এবং নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ এলাকায় পাহাড়ে একটি ঘরের উপর গাছ উপড়ে পড়েছে, এতেও ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ে।।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপ-সহকারি পরিচালক জসিম উদ্দিন দেশচিন্তাকে বলেন, পাহাড় ধসের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়।রাত আড়াইটা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত একটানা কাজ চালিয়ে মাটির নিচে চাপা পাড়া অবস্থা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতরা হলেন- বিবি জোহরা (৭০), মেয়ে নূরজাহান বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে আড়াই বছর বয়সী ফয়জুন্নেছা আক্তার ওরফে নূর আয়শা।
উদ্ধারকৃত নূরজাহানের স্বামী নূর মোহাম্মদ বলেন, তার শ্বাশুড়ি বিবি জোহরা লক্ষ্মীপুর থেকে শুক্রবার তাদের বাসায় বেড়াতে আসেনে। রাতে পাহাড়ের উপর থেকে দুই দফায় মাটির বড় খণ্ড ভেঙ্গে বসতির আশপাশে পড়তে দেখেন। এসময় তিনি আরো চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। এসময় বিবি জোহরাসহ তিনজন ঘুমাচ্ছিলেন। চার ছেলেমেয়েকে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে ফেরার পর দেখতে পান, তাদের ঘরের উপর মাটিচাপা পড়েছে।
এসময় ঘটনাস্থলে চট্টগ্রামেরর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, ফয়’স লেকের দক্ষিণে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়টি লিজ নিয়েছে কনকর্ড গ্রুপ। সেখানে পাহাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার আছে। গত ৬ দিন ধরে আমরা এখানে মাইকিং করেছি।কিছু পরিবারকে উচ্ছেদও করেছি।যে পরিবারটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়েছে তাদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি কম দেখে শুক্রবার বিকেলে তারা ফিরে এসেছে। এর মধ্যে রাতে পাহাড়ধসের ঘটনাটা ঘটল।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। মর্মান্তিক ঘটনার শিকার পরিবারটির সদস্যরা ভিক্ষাবৃত্তি করতেন বলেও জানা গেছে।
অপরদিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ এলাকায় পাহাড়ে একটি ঘরের উপর দেওয়াল ভেঙ্গে ও গাছ উপড়ে পড়েছে, শনিবার রাত সোয়া ১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এতে গুরুতর আহত অবস্থায় নূর আলম লাল্টু (৩৫) নামে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন। তিনি আরও জানান এসব ঝুকিপূর্ণ এলাকায় অতি টাকার লোভে ঘর ভাড়া দিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে বিপন্ন করা কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না।