দেশের অর্থনীতিকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াতে চাই। এই দেশের মানুষ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে। এটা বিএনপির সমস্যা নয়, গোটা জাতির সমস্যা। সমগ্র জাতি পরাজিত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে, সোচ্চার হতে হবে, রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। সব অর্জনকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট বার মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ফখরুল। এ সময় বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার জামিন না হলে কঠোর আন্দোলনে নামার হুমকি দেন।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে তা করা হচ্ছে, যেন বাংলাদেশ একটা পরনির্ভরশীল রাষ্ট্র হয়ে থাকে।’
রাষ্ট্র নতজানু হয়ে গেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হয় না; সীমান্তে হত্যাকাণ্ড চলে, তার বিচার হয় না, কোনও কথাও বলা হয় না, পানির কোনও হিস্যা আদায় করা যাচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ যে ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। যে চেতনার ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এত বছর পরও আমরা সেই গণতান্ত্রিক চেতনা অর্জন করতে পারিনি। এটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
‘বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য। তরুণসমাজ দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে বুকের রক্ত দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে।’- যোগ করেন ফখরুল। কিন্তু আজকের দিনে রাষ্ট্র এই তরুণ সমাজকে নতজানু করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আজ, যে নেত্রী তার সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে কাটিয়েছেন, রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই ত্যাগের মধ্য দিয়ে গেছেন। তিনি আজ কারাগারে। এখনও তিনি কারাভোগ করছেন, সেই গণতন্ত্রের জন্যই।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পর এই ৬৮ বছরের পুরোটিই ব্যর্থ হয়ে যায়নি। আমরা একটি রাষ্ট্র পেয়েছি। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য স্বাধীনতা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলের মানুষ— যারা ভাষার জন্য, দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, স্বাধীন পতাকা নিয়ে এসেছে, তারা কোনোদিন পরাজিত হতে পারে না। আজকে গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই চলছে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করার মাধ্যমেই তা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, বর্তমান সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমাদের এই অর্জনগুলোকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ করে দিতে চায়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। দেশকে ফ্যাসিস্ট সরকারের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে।’
‘নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করেছে বিএনপি’
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার একই সূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমরা আবারও জামিনের জন্য আবেদন করেছি, আমি আশাবাদী একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে জামিন দেবেন। আর যদি না দেন তাহলে আমাদের আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই। আমাদের বাধ্য করা হবে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নিতে।’
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র থাকলে বেগম জিয়া কারাগারে থাকতেন না। তিনি কারাগারে আছেন কারণ দেশে ন্যায়বিচার নেই, গণতন্ত্র নাই এবং দেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে।’
ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, ‘এটি একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল। পরবর্তীতে এটি স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়, আর স্বাধিকার আন্দোলন থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধ।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।