
বগুড়ায় বালুবোঝাই বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের চাকায় পিস্ট হয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মনি চন্দ্র সরকার (১০) ও তার আত্মীয় ইটভাটার শ্রমিক পলাশ চন্দ্র সরকারের (২১) মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সদর উপজেলার বগুড়া-নামুজা সড়কের নাথপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শিশু মনি ঘটনাস্থলে ও পলাশ বিকালে হাসপাতালে মারা যান।
জনগণ ট্রাকটি জব্দ করলেও এর চালক শিপন ও হেলপার পালিয়ে গেছে। প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনার পর ও দুপুরে দুই দফা বগুড়া-নামুজা সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ ট্রাক চালককে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে জনগণ অবরোধ তুলে নেন। বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রেজাউল করিম রেজা এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিশু মনি চন্দ্র সরকার বগুড়া সদরের নামুজা নাথপাড়ার অটো ভ্যান চালক নিত্য চন্দ্র সরকারের ছেলে। সে স্থানীয় চকরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। আত্মীয় পলাশ চন্দ্র সরকার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ছাতড়া হিন্দুপাড়ার নেপাল চন্দ্র সরকারের ছেলে। মঙ্গলবার বেলা ১০টার দিকে শিশুটি বাড়ি থেকে স্কুলের দিকে যাচ্ছিল। নাথপাড়া মোড়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য মনি ও তার আত্মীয় পলাশ পাকা রাস্তার পাশে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। এসময় বেপরোয়া গতিতে আসা শিবগঞ্জের বুড়িগঞ্জগামী বালু বোঝাই ট্রাকের (সিলেট-ড-১১-০৯৭৩) চালক শিপন মোড় ঘুরতে গিয়ে ট্রাকটি মাটির রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ট্রাকের ধাক্কায় শিশু মনি ও পলাশ ছিটকে পড়ে। এরপর চালক মনিকে পিষে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় পলাশ গুরুতর আহত হন। কিছুদূর যাওয়ার পর জনগণ ট্রাকটি জব্দ করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। আহত ভাটা শ্রমিক পলাশকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আবদুল আজিজ মন্ডল জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৩টার দিকে পলাশ মারা যান।
সেই ঘাতক ট্রাক
নামুজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেল মামুন জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা ঘাতক ট্রাক চালককে গ্রেফতার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দুই দফা বগুড়া-নামুজা সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে গ্রামবাসীরা অবরোধ তুলে নেয়।
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রেজাউল করিম রেজা জানান, নিহত দু’জনের লাশ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ট্রাকের চালককে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বিকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য খোরশেদ আলম কাজল বলেন, ‘এটা দুর্ঘটনা নয়, ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড। ট্রাক চালকের ফাঁসি হওয়া উচিত।’
ট্রাকের মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘চালক ছুটিতে যাওয়ায় সদর উপজেলার গোকুল খেলাঘর এলাকার শিপন গত তিন দিন ধরে তার ট্রাক চালাচ্ছিল। এটা একটি দুর্ঘটনা।’