
কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার সদর ও রামুতে শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে সিপা ইয়াসমিন(২৮) নামে এক নারী ও তার মা শাহনাজ বেগম(৪১)। সিপা ইয়াসমিন(২৮) কক্সবাজার সদর উপজেলার উত্তর হাজীপাড়া এলাকার মো: ইউনুসের মেয়ে।
জানা যায়, বিগত প্রায় অর্ধযুগ ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ইয়াবা বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন তারা। ইয়াবা ব্যবসার আশির্বাদে কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সিপা ইয়াসমিনের পরিবার।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফ থেকে কম মূল্যে ইয়াবা এনে সারাদেশে সরবরাহ করে আসছে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি সিপা ইয়াসমিন, তার স্বামী মোহাম্মদ জাবেদ এবং তার মা শাহনাজ বেগম।
অনুসন্ধানে, সিপা ইয়াসমিনের ইয়াবা সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান এনে প্রথমে কক্সবাজার ও রামুতে বিভিন্ন ভাড়া বাসায় মজুদ করা হয়। তারপর সেখান থেকে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেওয়া দেয়া হয় কক্সবাজার শহরসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ইয়াবা সরবরাহের কাজে সিপার রয়েছে পরিবহনকারী নারী-পুরুষের বিশাল সিন্ডিকেট।
সুত্রমতে, ইয়াবা পাচারকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার ইয়াবা নিয়ে হাতেনাতে আটক হলেও নানা কলা-কৌশলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে আইনের গ্যাড়াকল থেকে বের হয়ে আসেন সুচতুর সিপা ইয়াসমিন। এর পরও তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে মাদক মামলা। সম্প্রতি ৬ মার্চ লক্ষীপুর জেলার চন্দ্র গঞ্জে সিপা ইয়াসমিনের পাঠানো ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আটক হয় তার সিন্ডিকেটের সদস্য তরুন ওরফে আরিফ ওরফে আকাশ(৩২)। এই মামলায় সিপা ইয়াসমিনকে ২ নং আসামী করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মাদক দ্রব্য আইনের ৩৬(১) এর ১০(ক)/৪১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যার মামলা নং-২৯০/২০২৪।
অনুসসন্ধানে আরও জানা যায়, দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে সিপা ইয়াসমিনের ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যদের মাদক মামলা। তার মা কুখ্যাত ইয়াবা সম্্রাজ্ঞী শাহনাজ বেগমেরও রয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত অর্ধ ডজন মাদক মামলা। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারী লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার মামলা নং-২৫, তারিখ-২৪/০২/২০২৪। কক্সবাজার সদর থনার মামলা নং-০১/৩৪৬, তারিখ-০৩/০৭/২০২৩। মিরপুর মডেল থানার মামলা নং-০৮/৮২, তারিখ- ০৩/০২/২০১৯ সহ দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। এছাড়াও সিপা ইয়াসমিনের স্বামী জাবেদ একজন শীর্ষ ইয়াবা কারবারী। তার বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে অসংখ্য ইয়াবা মামলা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদক চোরা চালান করতে গিয়ে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়ে ভারতের একটি কারাগারে বন্দি রয়েছে সিপা ইয়াসমিনের স্বামী জাবেদ। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াবা বাণিজ্যের পাশাপাশি সিপা ইয়াসমিন ও তার মা শাহনাজ বেগম ইয়াবা বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জেলার ইয়াবা কারবারিদের নিজ বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন। এরপর নানা ছল-চাতুরীর মাধ্যমে মাদক ও রূপে মোহিত করে তাদেরকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এই সিন্ডিকেট। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, সিপা সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে অন্তত অর্ধশত যুবক সর্বশান্ত হয়ে গেলেও প্রভাবশালী সিপা ইয়াসমিনের হুমকি ও নানা কারনে মুখ খোলার সাহস পায়নি ভুক্তভোগীরা।
এলাকাবাসীসহ স্থানীয় সূত্রমতে, গত কয়েক বছরে সিপা ও তার মা শাহনাজ নামে-বেনামে কক্সবাজার সদর ও রামুতে কিনেছেন কোটি কোটি টাকার জমি, হাজি পাড়ায় বানিয়েছেন বাড়ি। নিজের বাড়ি থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘ্নে ইয়াবা সরবরাহ করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে সিপা ও তা মা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ও নাম-ঠিকানা গোপন রেখে থাকেন বিভিন্ন ভাড়া বাড়িতে। আলিশান জীবন-যাপনের জন্য কিছুদিন পরপর তিনি বদল করেন বাসা। কখনও কক্সবাজার, কখনও চট্টগ্রাম, কখনওবা রামুতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন সিপা। জানা গেছে, সিপা ইয়াসমিন ও তার মা শাহনাজ বেগম বর্তমানে কক্সবাজারের রামু উপজেলার একটি ভাড়া বাড়িতে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সিপা ইয়াসমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছে। মাদক ব্যবসায়ী যতবড় ক্ষমতাধর হোকনা কেন, ছাড় দেয়া হবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খোঁজ নিয়ে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।