
দেশচিন্তা নিউজ ডেস্ক:
দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে মানসম্মত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকাশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে সম্প্রতি চায়না ও সিঙ্গাপুর’র সাথে বাংলাদেশের ৮২টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষাবৃত্তি, ক্রেডিট ট্রান্সফার, দীর্ঘমেয়াদী ডিপ্লোমা শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার উন্নয়ন, ই-কনফারেন্স সহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আলোকে প্রতি বছর বাংলাদেশের বহু শিক্ষার্থী পূর্ণ সরকারি শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে চায়নায় ৩ বছরের ডিপ্লোমা পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ব্যাচে চট্টগ্রাম বিভাগের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি) থেকে ৬ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ সরকারি বৃত্তি নিয়ে চায়নাস্থ সরকারি প্রতিষ্ঠান নেনজিয়াং পলিটেকনিকে গমন উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অাজ ১৩ অক্টোবর এনআইটি’র কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। এনআইটি’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল আহসান হাবিব’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও গবেষক শামসুদ্দিন শিশির। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াস বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, এসডিজি এক্টিভিস্ট নোমান উল্লাহ বাহার, এনআইটি’র পরিচালক (অর্থ) নিগার সুলতানা, এনআইটি’র ভাইস প্রিন্সিপাল রিপন দেব প্রমুখ।
সভায় শামসুদ্দিন শিশির বলেন, সময়ের মূল্যায়ন ও কর্ম উদ্দীপনায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বলেন, এনআইটি থেকে চায়নায় স্কলারশীপে শিক্ষার্থী প্রেরণের সুযোগ প্রদানই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং চায়না থেকে শিক্ষার্থীরা উন্নত প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
বক্তারা আরো বলেন, প্রথাগত পদ্ধতিতে অদক্ষ, আধা-দক্ষ ও স্বল্পশিক্ষিত শ্রমশক্তি না পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনশক্তি রফতানি করা গেলে অত্যধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ^বাজারে শ্রমশক্তি রফতানিতে অন্যদের সমকক্ষ হতে চাইলে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের আগে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে, বিশেষ করে কারিগরি তথা হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে প্রশিক্ষিত করে প্রেরণ করলে একদিকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে অন্যদিকে প্রবাসে চাকরি সন্ধানকারীরাও উপকৃত হবে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, সর্বোপরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ হিসেবে কর্মসংস্থানের সংকট দৃশ্যমান। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন মতে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। ইউএনডিপির মতে, দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী বেকার যুবকের সংখ্যা ১ কোটি ৩২ লাখ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন আই.এল.ও প্রতিবেদন অনুযায়ী বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০ টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২ তম। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সবচেয়ে অধিক। বর্ধিত জনসংখ্যাকে সমস্যা নয় বরং সম্পদে পরিণত করতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের বৃহৎ তরুণ সমাজকে মাদকাসক্তি, অসামাজিক কার্যকলাপ, বেকারত্ব , হতাশা আর উৎকণ্ঠা থেকে বের করে জীবনকে ইতিবাচকভাবে সাজিয়ে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবারে অবদান রাখতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি আবশ্যক। উদীয়মান অর্থনীতিতে সফল হতে হলে বাংলাদেশকে শুধু উৎপাদন কাঠামোতে নয় বরং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ঘটাতে হবে বহুমাত্রিক রূপান্তর। শিল্প খাতই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের মূল চালক- সেটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও তেমন। অর্থনীতি আরো গতিশীল করতে দেশে প্রয়োজন বহুমাত্রিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এক হিসাব মতে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক শিল্পায়ন করতে হবে।