আজ : মঙ্গলবার ║ ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : মঙ্গলবার ║ ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১লা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মানবিক হওয়ার জন্য পশুত্ব বর্জনের অঙ্গীকার করতে হবে: তারেক রহমান

দেশচিন্তা ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন মানুষ, একজন নাগরিক হিসেবে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার হারানোর কারণে আমাদের অনেকের মনে হয়তো এক ধরনের অসহিষ্ণুতার জন্ম নিয়েছে। এই অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার জন্য, মনুষ্যত্ব অর্জন আর পশুত্ব বর্জনই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘প্রাণী ও প্রাণের মিলন মেলা’ অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব বলেন। দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

তারেক রহমান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, মানুষ হিসেবে আমরা রাষ্ট্র এবং সমাজে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে অন্য সকল প্রাণীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারেও আমরা আরো সতর্ক এবং যত্নবান থাকবো। সেই বিবেচনা থেকেই দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলের বাইরে এসে পশু, প্রাণী প্রাণী প্রেমী কিছু মানুষের আয়োজনের আজকে প্রাণী বিষয়ক এই আলোচনাটি অবশ্যই অর্থবহ এবং অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ।

রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্র এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাস্তবিকভাবেই বাস্তুতন্ত্র নিরাপদ থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন গণতন্ত্রের চর্চা ও সুরক্ষা প্রয়োজন, তেমনি প্রাণী অধিকার নিশ্চিতকরার জন্য বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা প্রয়োজন। প্রাণীকুলের মধ্যে এক ধরনের প্রাণীর আবাস কিংবা খাবারের ব্যবস্থা সাধারণত মানুষ করে থাকে। বন্যপ্রাণী হিসেবে যেসব প্রাণী চিহ্নিত, সেইসব নিজেরাই নিজেদের আবাস কিংবা খাবারের ব্যবস্থাগুলো করে থাকে। এইসব প্রাণীর জন্য বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিধান আসলেই অত্যন্ত জরুরি।

‘দেশ হোক সকল প্রাণের নিরাপদ আবাসস্থল’ এই স্লোগানে সকাল থেকে প্রায় ৪০ প্রজাতির পশু-পাখি মেলায় প্রদর্শনী হয়। পশু-পাখি প্রেমীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে দুটি পর্ব ছিল, প্রথম পর্বে সকাল ১০টা থেকে নানা ধরনের প্রাণী প্রদর্শন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্বে বিকাল ৪টা থেকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, প্রাণীর নিরাপত্তা, অধিকার রক্ষা, মানব সভ্যতার উৎকর্ষতা এবং বিকাশের পর্যায় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রাণীর নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষার বিষয়টি নির্ণয়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রাণী অধিকারের যে বিষয়টি, শুধুমাত্র প্রাণীদের প্রতি মানবিক দায়িত্বই নয় বরং জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণ বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা, মানবজাতির নিজেদের সুস্থ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাও কিন্তু অত্যাবশ্যক।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শুধুমাত্র মানবিক কিংবা সামাজিক কারণেই নয়, সৃষ্টিকূলে পশুপাখি- প্রাণীর কথা সকল ধর্মেই গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। প্রাণীজগতকে প্রকৃতি এবং পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে কিন্তু চিহ্নিত করা হয়েছে। সেটি ধর্মের অবস্থান থেকেও করা হয়েছে। বিভিন্ন মনীষেও বিভিন্ন সময়ে সেটি তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন প্রাণীর নামে অনেক সুরার নামকরণও করা হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বলছেন- ‘প্রাণিকুল সৃষ্টির (অন্যতম) কারণ হলো, এগুলোতে তোমরা আরোহণ করে থাকো আর এগুলো সৌন্দর্যের প্রতীক। আরো বলা হয়েছে ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছেআর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি। ’

পশুপাখি কিংবা বন্যপ্রাণী অর্থাৎ সৃষ্টি জগতের প্রতিটি সৃষ্টিই, একে অপরের জন্য উপকারী উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, মানব সমাজের বিকাশে প্রতিটি পশুপাখি কিংবা বন্য প্রাণীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। এডিস মশার লার্ভা খেয়ে মশার বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে। সুতরাং, এই বিষাক্ত মশার বিস্তার রোধের জন্য বিশেষ করে শহরে-নগরে ব্যাঙের জন্য নিরাপদ আবাস অর্থাৎ জলাশয় থাকা প্রয়োজন। এভাবে মানব সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থেই, প্রতিটি প্রাণের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

তারেক রহমান বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ এন্ড ন্যাচারাল রিসোর্স অর্থাৎ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের একটি সংস্থা আছে। প্রায় এক দশক আগে তাদের যে রিপোর্ট আছে, সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে- এই দেশে ১৬০০-এর বেশি প্রজাতি প্রাণী রয়েছে। এই ১৬০০-এর ভিতরে প্রায় ৩৯০টি প্রজাতি কিন্তু বিলুপ্তির মুখে চলে গেছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরো অনেক দেশেই কিন্তু মানুষের সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন আজ।

ঐতিহ্যের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিষয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাঘও এখন মনে হয় বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায় খুব সম্ভব স্থান করে নিচ্ছে। আমার যতটুকু মনে আছে, যতটুকু দেখেছি, আমার ধারণা আছে- আশির দশকে বাংলাদেশে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল খুব সম্ভবত ৪০০-এরও বেশি, ৫০০-এর কাছাকাছি। সর্বশেষ যে জরিপটা হয়েছে, সেই জরিপে যতটুকু আমার ধারণা আছে, সেই বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে এখন একশ’র কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। হাতির সংখ্যাও এখন কমে ২০০-এর নিচে চলে এসেছে। ঠিক এভাবে বাংলাদেশের আরো অনেক প্রাণি কিন্তু ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে এই বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদী, জলভূমি ভরাট, বন উজাড়সহ নানা কারণে একদিকে জীব-বৈচিত্র যে রকম হুমকির মুখে পড়ছে, ঠিক একইভাবে বন্য প্রাণি পাচারের ঘটনাও কিন্তু বেশ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আর এ সকল কারণেই কিন্তু বন্য প্রাণী, জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের যে আবাসস্থল, এগুলো কিন্তু অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, খুব সম্ভবত প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, জীব বৈচিত্র রক্ষা আইন, পরিবেশ উন্নয়ন আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের অনেকগুলো আইন রয়েছে। জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পশুপাখি, বন্যপ্রাণী তথা বাস্তুতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য- এই আইনগুলোকে আমরা ইনশাআল্লাহ সময় উপযোগী করব। এই আইনের অনেকগুলোর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন প্রয়োজন আছে। সেগুলোকে ইনশাআল্লাহ আমরা করব।

তারেক রহমান বলেন, আমার মনে হয়, দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন মানুষ, একজন নাগরিক হিসেবে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার হারানোর কারণে আমাদের অনেকের মনে হয়তো এক ধরনের অসহিষ্ণতার জন্ম নিয়েছে। এই অসহিষ্ণতা কাটিয়ে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার জন্য, মনুষ্যত্ব অর্জন আর পশুত্ব বর্জনই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ হিসেবে আমরা রাষ্ট্র এবং সমাজে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে অন্য সকল প্রাণীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারেও আমরা আরো সতর্ক এবং যত্নবান থাকবো। সেই বিবেচনা থেকেই দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলের বাইরে এসে পশু, প্রাণী প্রাণী প্রেমী কিছু মানুষের আয়োজনের আজকে প্রাণী বিষয়ক এই আলোচনাটি অবশ্যই অর্থবহ এবং অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ।

দেশের মানুষকে পশু ও ক্রিড়াপ্রেমী হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, প্রাণীদের অধিকার আদায়ে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক আদনান আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনি, আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ ও লোভা আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন তুহিন, বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান রুমন, বিএনপির সহ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ