মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাসের ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা সর্বজনীন পেনশন স্কিম করতে আগ্রহী জনসাধারণ। উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ভূমি অফিস, ইউনিয়ন ভূমি অফিস আপনার রেজিষ্ট্রেশন এর জন্য দ্রুত যোগাযোগ করুন।
সর্বজনীন পেনশনের বৈশিষ্টসমূহ: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।
চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
চাঁদাদাতা তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবে।
পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
নিম্ন আয়সীমার নিচে থাকা নাগরিকগণের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করবে।
আপাততঃ সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সর্বজনীন পেনশনের আওতা বহির্ভূত হবেন। তবে ক্রমান্বয়ে তাদেরকে এ ব্যবস্থার অধীনে আনয়ন করা হবে।সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
পেনশনারদের প্রদত্ত চাঁদার টাকা বিনিয়োগ বিধিমালার আওতায় সর্বোচ্চ নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য রিটার্ণের ভিত্তিতে পেনশনের মাসিক পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
সর্বজনীন পেনশনের স্কিমসমূহ: (ক) প্রবাস, (খ) প্রগতি, (গ) সুরক্ষা এবং (ঘ) সমতা।
(ক) প্রবাস (প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য): বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাস হতে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৫০০০/-, ৭৫০০/- এবং ১০০০০/- টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশীগণ দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সদস্যদের (বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী বা স্ত্রী) নামেও পেনশন স্কিম (সুরক্ষা) চালু করতে এবং মাসিক জমা পরিশোধ করতে পারবেন।
(খ) প্রগতি (ব্যক্তি মালিকানাধীন/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য): ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি/কর্মচারী বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে তাদের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০% কর্মী এবং বাকী ৫০% প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। এক্ষেত্রে upension সিস্টেমে সহজেই কোম্পানীর নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অতঃপর উক্ত কোম্পানীয় কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ নিবন্ধন করবেন।
কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ না করলেও, উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৩০০০/-, ৫০০০/- এবং ১০০০০/- টাকা।
(গ) সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য): অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন: কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/-, ২০০০/-, ৩০০০/- এবং ৫০০০/- টাকা।
(ঘ) সমতা (স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্র নাগরিকগণের জন্য): বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিম্নে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগণ [যাদের বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ (ষাট) হাজার টাকা, তবে বার্ষিক আয়ের সমর্থনে কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন নেই] তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/- টাকা, যার ৫০০ টাকা চাঁদাদাতা প্রদান করবেন এবং অবশিষ্ট ৫০০ টাকা সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করবে।
একটি উন্নত রাষ্ট্রকে কেবল জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি, জিডিপি’র আকার ও জনগণের মাথাপিছু আয় দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। নাগরিকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তাও উন্নত রাষ্ট্রের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সর্বজনীন পেনশনের ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত সর্বজনীন পেনশন স্কিম নাগরিকদের বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ একটি অধিকতর কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, যা হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের সমার্থক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.