নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ :
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়া হাছনদন্ডী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় কামাল হত্যার নেপথ্যে ছিল আধিপত্য বিস্তার ও মামলা প্রত্যাহার না হওয়া। এদিকে মতিউর রহমানের ভাই গোলাফুর রহমান বাদী হয়ে নিহত কামাল তার ভাই নেছার ও জহির উদ্দিন বাবুলসহ ১০ জনকে আসামী করে গত ১১ অক্টোবর আদালতে ১টি মারামারির মামলা দায়ের করেন।
গত ৬ অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাতবাড়ীয়া হাছনদন্ডী এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে সারাদিন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সন্ধ্যায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় মৃত আবদুস ছালামের ছেলে ভ্যান চালক কামাল উদ্দিন (৪৫) গুরুতর আহত হয়। তাকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৫ দিন পর চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১০ অক্টোবর ভোর রাতে মারা যায় কামাল। কামালের ৯ বছরের ১ ছেলে, ৬ ও ২ বছরের ২টি কন্যা সন্তান রয়েছে বলে জানা যায়। কামালের মৃত্যুর ৩ দিন পর তার ছোট ভাই নেছার উদ্দিন বাদী হয়ে মৃত আজিজুর রহমানে ছেলে মতিউর রহমান (৪৮), তার ভাই গোলাফুর রহমান (৪০), ছেলে তারেকুর রহমান (২৪), স্ত্রী মর্জিয়া বেগম (৪০), কাঞ্চননগর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মুজাফ্ফরের ছোট ভাই সায়েদ মো. প্রকাশ তানিম উদ্দিন (২৫), চন্দনাইশ সদরের মো. শওকতসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামী করে কামালের মৃত্যুর ৩ দিনপর চন্দনাইশ থানায় গত ১৩ অক্টোবর রাতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, উপজেলার সাতবাড়ীয়ার হাছনদন্ডী মাঝির পাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নেছার এবং মতিউর রহমান দু’জনই আপন চাচাতো-জেঠাতো ভাই এবং দু’জনই সরকারি দলের সমর্থক। এক সময় দু’জনই একই গ্রুপ থাকলেও বিগত এক বছরের অধিককাল পূর্বে দু’জনই পৃথক হয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে চলছিল। স্থানীয়রা জানান, ২০১৬ সালে আক্কাসের দায়ের করা মামলায় নেছার, বাবুল, আলী হোসেন, জাকের হোসেনকে আসামী করা হয়। সে মামলায় পরবর্তীতে আসামীদের সাথে বাদীর আক্কাসের আপোষ মিমাংসা হয়। সে হিসেবে বাদী আক্কাস আদালতে আপোষনামা দেয়ার সিন্ধান্ত হয়। কিন্তু নেছারের প্রতিপক্ষগণ প্রায় দু’বছর ধরে আক্কাসকে আদালতে যেতে দেয় নাই। এদিকে আসামী আলী হোসেন এবং জাকের হোসেন জামিনে গেলেও নেছার এবং বাবুল জামিন হয়নি বলে জানা যায়। জামিনপ্রাপ্ত আসামীরা জামিনে গিয়ে হাজিরা না দেয়ায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ইস্যু হয়। ফলে পুলিশ আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। আলী হোসেনের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। গত ৬ অক্টোবর সে উত্তেজনার জের ধরে প্রতিপক্ষরা বাবুলের ঘরে হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে। পরবর্তীতে প্রতিপক্ষগণকে এলাকায় উঠতে না দিলে তারা সংঘঠিত হয়ে ঐদিন সন্ধ্যায় এলাকায় আসলে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে সন্ধ্যার পর ভ্যান চালক মো. কামাল উদ্দিন খানহাট থেকে সবজি বিক্রি করে এসে ঘরে প্রবেশ করে। পার্শ¦বর্তী দোকানে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে তার উপর হামলা শুরু হলে সে গুরুতর আহত হয়। চমেক হাসপাতালে দীর্ঘ ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে গত ১০ অক্টোবর ভোর রাতে কামাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ঘটনার ৩ দিন পর হত্যা মামলা দায়ের হলে প্রতিপক্ষদের ঘরে তালা ঝুলতে থাকে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এজাহার নামীয় এবং প্রতিপক্ষের স্বজনেরা এলাকা ছাড়া হয়ে আছে। তবে পুলিশ অধ্যবদি কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তদন্তকারি কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এসএম দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেছেন, তদন্তভার গ্রহণ করে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদীর ভাই বাবুলসহ আসামীদের বাড়ীতে তল্লাশী চালান। তবে কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। থানা অফিসার ইনচার্জ কেশব চক্রবর্তী বলেছেন, মামলার তদন্তকাজ এগিয়ে চলেছে।
এদিকে মতিউর রহমানের ছোট ভাই গোলামফুর রহমান বাদী হয়ে গত ১০ অক্টোবর ভোর রাতে নিহত ভ্যান চালক কামাল উদ্দিন তার ভাই নেছার উদ্দিন, জহির উদ্দিন বাবুলসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মারামারির ঘটনা দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদনের জন্য থানায় প্রেরণ করেন। আগামী ১৫ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.