আজ শুভ বিজয়া দশমী। বাঙালি হিন্দুদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবের সমাপনী দিবস। আজ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটবে। দেবী দুর্গা অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক। এ বিজয় অর্জিত হয় আদ্যাশক্তি মহামায়ার সক্রিয় ভূমিকায়। মাতৃরূপিণী মহাশক্তি দুর্গা অশুভ শক্তির কবল থেকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ও ভক্তকুলকে রক্ষা করেন। এই অমিত চেতনার সঙ্গে আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতি যুক্ত হয়ে দেবী দুর্গাকে বাঙালি হিন্দু সমাজ ‘ঘরের মেয়ে’ হিসেবেই বরণ করে নেয়।
দুর্গাপূজার শুরু হয় মহালয়ায়। এদিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়। এর ঠিক পাঁচদিন পর মহাষষ্ঠীতে বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। শারদীয় দুর্গাপূজায় সাধারণত মহালয়া ও ষষ্ঠীর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধান থাকলেও আশ্বিন মাস মল (মলিন) মাস হওয়ার কারণে এবার প্রায় ৩৫ দিন পর শুরু হয় ষষ্ঠী পূজা। মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা। কদলীবৃক্ষসহ আটটি উদ্ভিদ ও জোড়াবেল একসঙ্গে বেঁধে শাড়ি পরিয়ে একটি বধূ আকৃতিবিশিষ্ট করে দেবীর পাশে স্থাপন করা হয়। এই হল ‘নবপত্রিকা’, প্রচলিত ভাষায় যাকে ‘কলাবউ’ বলা হয়। মহাষ্টমীতে মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমীব্রত, মহাষ্টমী ব্রতোপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা, সন্ধিপূজা ও বলিদান। মহানবমীতে কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা। বিজয়া দশমীতে বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়া দশমী কৃত্য ও কুলাচার অনুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা। এই দশমী তিথি বিজয়াদশমী নামে খ্যাত। শুভ বিজয়া উপলক্ষে আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব নাগরিককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
প্রতি বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও সার্বজনীন দুর্গোৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেয়। এ দেশে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এক ধর্মাবলম্বী অন্য সম্প্রদায়ের বিপদে-আপদেও পাশে দাঁড়ায়। এটা বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির পরিচায়ক। মাঝেমধ্যে অশুভ শক্তি এ পরিচয় মুছে ফেলতে তৎপর হলেও সাধারণ মানুষ কখনই একে প্রশ্রয় দেয়নি। তবে সম্প্রীতির বিষয়টি কেবল বিশেষ উপলক্ষ বা পর্বে সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। সর্বসময়ে সংখ্যালঘুসহ সব ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দুর্গাপূজার এবারের আয়োজন সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। পূজার অনুষ্ঠানমালা শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির বা মণ্ডপ প্রাঙ্গণে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আতশবাজি, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভক্তিমূলক গান বন্ধ রাখা হয়। জনসমাগম বন্ধ করতে এমনকি মন্দিরে মন্দিরে পূজার প্রসাদ খিচুড়ি বিতরণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাত ৯টার মধ্যে মন্দির বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া হয়। তারপরও ভক্তদের মাঝে পূজার আবেদন কমে যায়নি।
দুর্গাপূজার সঙ্গে বাংলার প্রকৃতির রয়েছে নিগূঢ় সম্পর্ক। শরত-হেমন্তের শুভ্র কাশফুলের মতো মানব হৃদয়েও পুণ্যের শ্বেতশুভ্র পুষ্পরাশি প্রস্ফুটিত হোক। অসুরকে বধ ও অশুভকে বিনাশ করে মানব মনে সঞ্চারিত হোক শুভ চেতনা- এটাই হোক বিজয়া দশমীর প্রত্যাশা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.