
রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের হেফাজতে মাসুদ রানা (৩৩) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে আটকের পর রাতে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের দাবি, মাদক সেবনজনিত অসুস্থতার কারণে হেলে পড়ে মাথায় আঘাত পান মাসুদ। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যান তিনি। তবে তার স্বজনদের দাবি, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে ধরে এনে তাকে নির্যাতন করে পুলিশ। এর ফলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
মাসুদ রানাকে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্ত দাবি করে পুলিশ বলছে, রাজধানীর গুলিস্তান থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ৩০০ পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার ডিসি ওয়ালিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে গুলিস্তান থেকে ইয়াবাসহ মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পল্টন থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাদক সেবনজনিত অসুস্থতার কারণে তার মাথা একদিকে হেলে পড়ে। এতে মাথায় আঘাত লাগে। তখনই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
তবে মাসুদ রানার শ্বশুর আবদুল মান্নান অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার দুপুরে তার জামাতা মাসুদ রানাকে কাঁচপুরের সিনহা টেক্সটাইলের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তারা জানতে পারেন, পল্টন থানায় তাকে আটকে রাখা হয়েছে। এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তার কথাও হয়। ওই সময় তিনি জামাতার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলিয়ে দেননি। পরে রাত ১১টায় খবর পান, অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, পল্টন থানার এসআই এনামুল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাসুদ রানাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তখন তিনি জানান, গুলিস্তান এলাকায় রাস্তার পাশে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়েছিলেন ওই যুবক।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার বিকালে মাসুদ ও তার বন্ধু মমিনকে গ্রেপ্তার করে পল্টন থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মাসুদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি করে মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।
স্বজনরা জানান, মাসুদ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি যাত্রামুড়া এলাকার ফয়সাল রোলিং মিলে লোহার প্লেট কাটার কাজ করতেন। কাঁচপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার স্ত্রীর নাম রেহানা আক্তার। তাদের দুটি মেয়ে রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার চর বাকুটিয়ায়। মাসুদের বাবা মৃত জলিল বেপারি। মাসুদের মৃত্যুকে হত্যাকা- আখ্যা দিয়ে এতে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চেয়েছেন স্বজনরা।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল বিজ্ঞপ্তিতে আসক বলে, দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। যখন কোনো ব্যক্তি আটক বা গ্রেপ্তার হয় তখন তিনি রাষ্ট্রের হেফাজতে চলে যান। আটক বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির সব ধরনের নিরাপত্তার দায় রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। প্রায়ই দেখা যায়, আটক ব্যক্তিদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে, যা অনাকাক্সিক্ষত এবং অপ্রত্যাশিত। গতানুগতিক তদন্তের নামে নির্যাতন বা মৃত্যুর কারণগুলো অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছে।