করোনার কারণে দিনাজপুরের হিলিতে মাহালি জনগোষ্ঠীর বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ধার-দেনা করে চলেছে তাদের জীবন। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় পণ্য তৈরি শুরু করেছেন তারা। তবে এখনও বেচাকেনা নেই আগের মতো। মাথার ওপরে রয়েছে দেনার বোঝা, সেই দেনা কাটিয়ে উঠতে ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিনা সুদে লোন চেয়েছেন তারা।
হিলির গোহাড়া মাহালিপাড়া ও খট্টামাধবপাড়ার মাহালিপাড়ায় মাহালি জনগোষ্ঠীর ২০০ মানুষের বাস। দীর্ঘদিন ধরেই তারা ডালি, কোরপা, কুলা, ধামাসহ বাঁশের বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করে। তা বিক্রি করে জীবিকা করেন।
হিলির গোহাড়া মাহালিপাড়ার বাসন্তি রানি ও বাবলু মিনজি বলেন, আমরা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে তা বিক্রি করি। করোনার কারণে আমাদের বেশ কিছুদিন ধরেই একেবারে কাজ-কর্ম বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে আছি। করোনার কারণে আমরা যে বাড়ি থেকে বের হবো সেটিও হচ্ছে না। এমনকি বাঁশ কিনে যে জিনিসপত্র তৈরি করবো সেই বাঁশ পর্যন্ত কিনতে মানুষজন গ্রামে ঢুকতেও দিত না। ফলে লাভের ওপরে ধার দেনা করে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে এসেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আবার বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এরপরেও বাজারে তেমনভাবে বেচাকেনা না থাকায় আয় উপার্জন কম। এতে আমাদের খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। এছাড়া বাঁশসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব জিনিস তৈরি করে তেমন একটা পড়তাও নেই।
হিলি বাজারে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রেতা বাদল মিন্ডি বলেন, করোনায় বাজারে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের একেবারেই বেচাকেনা ছিল না। ফলে বেশ কয়েকমাস আমাদের খুব কষ্ট করে চলতে হয়েছিল। মানুষের কাছে ধার-দেনা করে চলায় বেশ দেনা পড়ে গেছে। বর্তমানে বেচাকেনা শুরু হলেও এখনও আগের মতো বেচাকেনার অবস্থা নেই। এখন যা হচ্ছে তাই দিয়ে কোনোরকমে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলছি। তবে আশা করছি সামনে করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে ভালোভাবে বেচাকেনা শুরু হবে তাতে করে আমরাও ভালোভাবে চলতে পারবো।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, হিলিতে বেশ কিছু মাহালি সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছেন যারা বাঁশ দিয়ে গৃহস্থালি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু করোনা কালে সময়ে তারা অনেকটাই কর্মহীন হয়ে পড়েছে ও তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। যার কারণে তারা অভাবের মধ্যে পড়েছে। এটাকে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে তাদের তৈরি করা ডালা দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এছাড়া তাদের মধ্যে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যাদের খাবার সংকট ছিল আমরা উপজেলা প্রশাসন ও পৌসভার পক্ষ থেকে তাদেরকে কয়েকবার খাবার প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে যেহেতু সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে, তাদের কার্যক্রমে তারা ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছে আশা করছি তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। একইসঙ্গে তাদের ব্যবসা শুরু করতে যদি তাদের মূলধনের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে উপজেলার বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে স্বল্প ও বিনা সুদে লোনের ব্যবস্থা করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.