প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। শনিবার এতে মারা গেছেন আরও ৮৯ জন। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ৮১৩ জন। এর মধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃত্যু হয়েছে ৮১১ জনের। এছাড়া হংকং ও ফিলিপাইনে মারা গেছেন একজন করে।
রোববার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জনিয়েছে, করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২০০২-০৩ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্সকেও (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ছাড়িয়ে গেছে। সে সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ২৪টিরও বেশি দেশে মোট ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়, আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৯৮ জন।
শনিবার চীনে নতুন করে আরও ২ হাজার ৬৫৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। ফলে দেশটির মূল ভূখণ্ডে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ১৯৮ জন। এদিন চীনে প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল করোনাভাইরাসের উৎসস্থল উহানে এক মার্কিন ও এক জাপানি নাগরিক মারা গেছেন।
মানুষ থেকে মানুষে সহজেই সংক্রমণযোগ্য হওয়ায় বেশিরভাগ দেশ চীনের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। চীনফেরতদের জন্য সীমান্ত বন্ধ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ। জাপান ও হংকংয়ে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে দুটি প্রমোদতরীকে। এর যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে মূলভূমিতে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না।
জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ডায়মন্ড প্রিন্সেসে এখন পর্যন্ত ৬৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। প্রমোদতরীটির ‘সন্দেহজনক’ ২৮০ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ৬৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে বন্দরের কাছে পানির ওপর ভাসছে জাহাজটি। এখন পর্যন্ত শুধু ভাইরাস আক্রান্তদের নামিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাহাজেই থাকবে হবে।
ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের আক্রান্তের অনেক ঘটনাই হয়তো সামনে আসছে না। এ কারণে এর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা তার ১০ গুণ বেশি হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের বিষয়ে তদন্ত করতে তারা চীনে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে। দলটির প্রধান সোমবারই চীনে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কোন দেশে কতজন আক্রান্ত?
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চীন ছাড়া এসব দেশ ও অঞ্চলে ৩১০ জনের বেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন, বেলজিয়ামে একজন, কম্বোডিয়ায় একজন, কানাডায় সাতজন, ফিনল্যান্ডে একজন, ফ্রান্সে ১১ জন, জার্মানিতে ১৩ জন।
হংকংয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও কমপক্ষে ২৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন, ইতালিতে তিনজন।
জাপানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ জন; এদের মধ্যে ৬৪ জনই প্রমোদতরীর। অপরদিকে ম্যাকাওতে ১০ জন, মালয়েশিয়ায় ১৬ জন, নেপালে একজন, রাশিয়ায় দু'জন, সিঙ্গাপুরে ৪০ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫ জন, স্পেনে একজন, শ্রীলঙ্কায় একজন, সুইডেনে একজন, তাইওয়ানে ১৭ জন এবং থাইল্যান্ডে ৩২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
ফিলিপাইনে তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেখানে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরব আমিরাতে সাতজন, যুক্তরাজ্যে তিনজন, যুক্তরাষ্ট্রে ১২ জন জন এবং ভিয়েতনামে অন্তত ১৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.