আজ : শনিবার ║ ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আজ মেহেরপুর মুক্ত দিবস

দেশচিন্তা ডেস্ক: আজ ৬ ডিসেম্বর, মেহেরপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মেহেরপুর থেকে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় জেলা। বিজয়ের পতাকা ওড়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগরসহ গোটা এলাকায়।

রক্তঝরা লড়াই, দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতার সকাল আজও মেহেরপুরবাসীর হৃদয়ে উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে জেগে আছে। বিজয়ের সেই মুহূর্তে শহরের মানুষ দলে দলে রাস্তায় নেমে আসে। কেউ লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতার গান গেয়ে বেড়িয়েছে, কেউবা বাড়িতে বাড়িতে মিষ্টি বিলিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেছে। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ—সবার চোখে ছিল এক অসীম স্বস্তির অশ্রু, মুক্ত ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার গর্ব আর বিজয়ের উল্লাস।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মেহেরপুর জেলা ইউনিটের সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ জানান, ১৯৭১ সালে মেহেরপুরের মানুষ অকুতোভয় সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তারা দেশে ফিরে সংগঠিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ শুরু করেন।

তিনি জানান, ৫ ডিসেম্বর বিকেলে জেলার বিভিন্ন দিক থেকে হানাদার বাহিনীর ওপর সমন্বিত আক্রমণ চালানো হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণটি হয় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বামুন্দি এলাকায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আঘাতে পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব হক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেদিন (৫ ডিসেম্বর) রাত থেকেই হানাদাররা কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার দিকে পিছু হটতে থাকে। খলিশাকুন্ডি হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা নৃশংসতার চিহ্ন হিসেবে আমঝুপি দ্বীনদত্ত ব্রিজ, ওয়াবদা অফিসসহ জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে যায়। পরদিন ৬ ডিসেম্বর সকালে মেহেরপুরে আর কোনো পাকিস্তানি সেনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, মুক্ত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগরসহ পুরো জেলা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া বুলু সেই দিনের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, ৬ ডিসেম্বরের সেই সকাল ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনের দিন। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ খুলে উল্লাস করেছিলেন। সাধারণ মানুষও আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। বাড়িঘরে মিষ্টি বিলানো, পতাকা উড়ানো—সব মিলিয়ে পুরো জেলা যেন এক উৎসবমুখর শহরে পরিণত হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আজ আমাদের একটাই চাওয়া—এই দেশকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিশাপমুক্ত দেখতে চাই।

মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সামসুল আলম সোনা বলেন, স্বাধীনতার এই অর্জন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন ও অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর সম্মান রক্ষা করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। তিনিও দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত দেশের দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ