দেশচিন্তা ডেস্ক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সাবেক মন্ত্রী, বিএনপি নেতা মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরী শুধু সৎ, যোগ্য ও গণমানুষের নেতা ছিলেন না, তিনি একজন সংগ্রামী ব্যক্তি ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছে, তার প্রতিটি মুহূর্তে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী তার পাশে ছিলেন।
তিনি শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে বাঁশখালী জলদি পাইলট হাই স্কুল মাঠে বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
স্বরণ সভার আগে নেতৃবৃন্দ বাঁশখালীর গুণাগরিতে মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মোনাজাত করেন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সন্তান জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বরণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব ইদ্রিস মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, বাঁশখালী আসনের বিএনপির প্রার্থী মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সন্তান মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পটিয়া আসনে বিএনপির প্রার্থী এনামুল হক এনাম।
আমীর খসরু বলেন, যখন খুবই কঠিন সময়, মানুষ ভয়ে জীবন যাপন করছিল, তখনও জাফরুল ইসলাম চৌধুরী কর্ণফুলীর সেতুর উভয়পাড়ে, বাঁশখালীসহ সব কর্মসূচিতে তার লোকজন নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত, অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাঁশখালীর জনগণ যে নেতা পেয়েছিলেন, তিনি আজ নেই। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। তার কথা মনে রেখে আগামী বাঁশখালী কোন দিকে যাবে, আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধানের শীষের প্রার্থীর মাধ্যমে জাফরুলের নেতৃত্ব ও রাজনীতির ধারাবাহিকতা বহন করবে তার সন্তান মিশকাতুল ইসলাম পাপ্পা।
খসরু নিশ্চিত করেন, মিশকাতুল ইসলাম পাপ্পার নেতৃত্বে বিএনপির রাজনীতি, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনীতির পথ অনুসরণ করে বাঁশখালী পরিচালিত হবে।
নির্বাচন ব্যাহত করতে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিগত দিনের পরাজিত শক্তি কখনোই নির্বাচনে জিততে পারবে না। তাই তারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে এবং দেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের ১৭ বছরের ত্যাগকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে এবং নির্বাচনের কর্মসূচি পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে, দুয়ারে দুয়ারে যোগাযোগ করতে হবে, মা বোনদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে এবং ধানের শীষের জোয়ার পুরো দেশে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আগামীর নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। জনগণের চাহিদা পূরণ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাত উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট।
দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক পরিবারে যে পকেট থেকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য টাকা খরচ করতে হতো, আগামীদিনে তা আর খরচ করতে হবে না। সবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হবে, কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে এবং সকলের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হবে।
আমীর খসরু বলেন, কারিগরি শিক্ষার অভাবের কারণে দেশের শ্রমিকরা নিম্নমানের চাকরিতে নিযুক্ত রয়েছেন। আমরা তাদের দক্ষতা উন্নীত করে ভবিষ্যতে আয়ের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি করব, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষকে অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। দেশের অর্থনৈতিক সুফল প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। যে গোষ্ঠী বিগত দিনে লুটপাট করেছে, আমরা তা বন্ধ করে দেব। আগামীতে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে যাবে।
আমীর খসরু উল্লেখ করেন, তারেক রহমান দেশ পরিচালনায় একটি বিশাল কর্মসূচি দিয়েছেন। প্রত্যেক মানুষ যাতে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে পারে, সেইভাবে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো দেশ চলতে পারে না। ১৪ মাস ধরে একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে বাংলাদেশ চলছে। যার ফলে সবকিছু স্থবির, মিল-কারখানা বন্ধ, অর্থনীতি নিম্নগামী, বিনিয়োগ বন্ধ, এবং প্রতিদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। অতএব, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবশ্যই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং দেশে একটি নির্বাচিত সংসদ ও সরকার গঠন করতে হবে, যা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
আমীর খসরু বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ধানের শীষের বিজয়ের মধ্য দিয়ে আগামীর দেশের যেসব সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেননি, তা ইনশাআল্লাহ এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। বিএনপি তার ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কারের যে ওয়াদা করেছে, তা পরিপূর্ণভাবে পালন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তাই বাঁশখালীতে মিশকাতুল ইসলাম পাপ্পাকে বিজয়ী করতে হবে। আর বিজয়ী করতে হলে বসে থাকলে চলবে না— সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে প্রতিদিন উঠান বৈঠক করতে হবে, প্রতিদিন প্রতিটি ঘরে যেতে হবে এবং বিএনপির চিন্তা–চেতনা জনগণের সামনে তুলে ধরে আগামীর নির্বাচনে একটি বিশাল জয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
আমীর খসরু আরও বলেন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর আত্মা শান্তি পাবে আবারও বাঁশখালী থেকে মিশকাতুল ইসলাম পাপ্পাকে ধানের শীষের পক্ষে বিজয়ী করতে পারলে। আগামীর বাংলাদেশে যে আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশা, বাঁশখালীর উন্নয়নসহ সব কিছু পূরণ করতে হলে পাপ্পাকে বিজয়ী করতেই হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বাঁশখালীর চার বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আজকের স্বরণ সভাকে কেন্দ্র করে বাঁশখালীতে ধানের শীষের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে বাঁশখালী-১৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ের মাধ্যমে বিএনপি ও জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রতি বাঁশখালীর মানুষের ভালোবাসা আবারও প্রমাণ করবে, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইদ্রিস মিয়া বলেন, বহু আন্দোলন সংগ্রামে, দলীয় কর্মসূচিতে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে থেকেছি। দলের প্রতি তার আত্মত্যাগ চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন পীড়ন ও নির্যাতনের মুখেও কখনো পিচপা হননি। তিনি এমন একজন নেতা ছিলেন যার সঙ্গে সকলের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি সাধারণ মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন।
মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা বলেন, আমার পিতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী শুধু একজন নেতা নন, তিনি ছিলেন দক্ষ সংগঠক। তিনি ছিলেন বাঁশখালীর মাটি ও মানুষের নেতা। তার নেতৃত্বে দক্ষিণ জেলা বিএনপি সুসংগঠিত হয়েছিল। শত শত নেতাকর্মী গড়ে উঠেছে তার হাত ধরে। অসুস্থতা নিয়েও তিনি রাজপথে থেকে দলের কর্মসূচি পালন করেছেন। আমি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সন্তান হিসেবে সব সময় বাঁশখালীবাসীর পাশে থাকবো। আপনারা সবাই আমার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করবেন।
এনামুল হক এনাম বলেন, মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ ও জনবান্ধব রাজনীতিক। যিনি সবসময় দল ও এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি মরহুমের রাজনৈতিক অবদান ও জনগণের প্রতি তাঁর নিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন।
বিএনপি নেতা এডভোকেট শওকত ওসমান ও এডভোকেট নাছির উদ্দীনের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি এডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোসাইনী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর কন্যা ফারহানা ইয়াসমিন আঁখি প্রমুখ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.